সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বিশ্বে প্রথম সারিতে ছিল বাংলাদেশ। এমডিজির ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ঘোষণা করে জাতিসংঘ। তবে এই অভীষ্ট অর্জনে শুরু থেকেই বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এখন আরও পিছিয়ে পড়ছে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘ যে টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে এসডিজি অর্জনে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৭তম। এর আগের বছর ১৬৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০১তম। আর ২০২২ সালে ১৬৩ দেশের মধ্যে ছিল ১০৪তম।
এসডিজি নামক বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডায় ২০৩০ সাল নাগাদ এমন একটি সমাজব্যবস্থার কথা কল্পনা করা হয়েছে, যে সমাজব্যবস্থায় উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে কোনো মানুষ পিছিয়ে থাকবে না। সমাজে হ্রাস পাবে আয় ও সম্পদের বৈষম্য, নিশ্চিত হবে ন্যায়বিচার, থাকবে না ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, মানুষ দক্ষতা অর্জন ও আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহত হবে টেকসই উপায়ে, স্থলজ ও জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক চলাচল হবে নির্বিঘ্ন ও পরিবেশের সুরক্ষার বিষয় পাবে সর্বাধিক অগ্রাধিকার।
এসব বিষয় অর্জনের জন্য যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে সেটিকে একত্রিতভাবে ‘সমগ্র সমাজ পদক্ষেপ’ বা হোল অব সোসাইটি অ্যাপ্রোচ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এসডিজির ১০ বছর অতিবাহিত হয়েছে। সামনে সময় আছে আর মাত্র পাঁচ বছর। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রাগুলোর বেশিরভাগই অর্জিত হয়নি, যা সরকারি মূল্যায়নেও উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এসডিজি অর্জনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন চ্যালেঞ্জ। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে জিইডি। সেই সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, এসডিজি অর্জনের জন্য ২০১৭ সালের পর থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ সরকারের নিয়মতান্ত্রিক বাজেট প্রক্রিয়ার বাইরে অতিরিক্ত আরও ৯২৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। তবে সরকারের ওই পর্যালোচনা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসডিজি অর্জনে প্রকৃতপক্ষে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সে বিষয়ে নতুন করে মূল্যায়ন হওয়ার দরকার বলে সংশ্লিষ্ট মনে করেন। তাছাড়া গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুরো চিত্রই পাল্টে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতেই হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে এসডিজি বাস্তবায়নে আলাদা নজর দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যে মাত্রায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দরকার ছিল বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছে না।
আপনার মতামত লিখুন :