সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

হত্যাযজ্ঞের নীলনকশায় ইয়াহিয়ার অনুমোদন

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ১০:০১ এএম

হত্যাযজ্ঞের নীলনকশায় ইয়াহিয়ার অনুমোদন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অগ্নিঝরা মার্চের ২০তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনে টালমাটাল ছিল চারদিক। ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা ওড়ানো অব্যাহত ছিল। সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চলছিল কর্মবিরতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। দেশজুড়ে স্বাধীনতার দাবিতে চলে সভা-শোভাযাত্রা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন আবারও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। 

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর সিদ্দীক সালিকের বই থেকে জানা যায়, এদিন ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠাসহ পদস্থ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। 

এদিন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাঙালির স্বাধিকারের আন্দোলন চিরতরে দমনের নীলনকশা বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ সকালে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইয়াহিয়া খানের চতুর্থ দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ছয় শীর্ষ সহযোগী- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। 

সোয়া দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। সময় এলে অবশ্যই আমি সবকিছু বলব। রাতে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বদরবারে এক অনুপ্রেরণাদায়ী দৃষ্টান্ত।

এদিকে এদিন ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পিরজাদা, জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠাসহ পদস্থ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। 

বৈঠকে তিনি সামরিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা করেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হলে তাদের করণীয় বিষয় হয় বাঙালি জাতিকে দমন। সেজন্য ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন করা হয়।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সাবেক নৌসেনাদের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতাসংগ্রামে সহযোগিতার জন্য একটি সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী কমান্ড গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। 

এদিকে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ছয়টি থেকে ১৭টি পর্যন্ত পিআইএ ফ্লাইটে করে সৈন্য ও রসদ ঢাকায় আনা হচ্ছিল। কয়েকটি জাহাজ পূর্ণ করে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হচ্ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর শক্তি ছিল এক ডিভিশন, ২০ মার্চ তা হয় দুই ডিভিশনের বেশি।

ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রবোঝাই বিমান চলাচল বন্ধের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়।

এদিনও সকাল থেকে একের পর এক শোভাযাত্রা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশে একাধিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়কে পৃথিবীর কোনো শক্তিই রুখতে পারবে না। 

করাচিতে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান, তিনি প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে সন্তোষজনক জবাব পেয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলি এ কে ব্রোহি এদিন সকালে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!