মিয়ানমারের সামরিক সরকার প্রধান মিন অং হ্লাইং আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য BIMSTEC (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) সম্মেলনে যোগ দেবেন।
এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো দেশে তার অন্যতম বিরল সফর। নেপিদো চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠকের ব্যবস্থা করা যায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডে আঞ্চলিক নেতাদের এক সম্মেলনে অংশ নেবেন। ক্ষমতা দখলের পর এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো দেশে তাঁর অন্যতম বিরল সফর। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের ফলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলো মিন অং হ্লাইংয়ের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আসিয়ান জোটের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতেও নিষেধ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, মিন অং হ্লাইং আগামী ৩-৪ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের উদ্যোগ নিচ্ছে।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কর্মকর্তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্ক ও বিমসটেক উইং এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার বৈঠকের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। ভারতের সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা জান্তা প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী মোদির মধ্যে বৈঠকের জন্য নয়াদিল্লির কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, তবে ভারত এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের একজন মুখপাত্রের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানের সম্মেলনে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বিমসটেক সদস্যভুক্ত সব দেশের নেতারা তাঁদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পর থেকে মিয়ানমার গভীর সংকটে রয়েছে। অভ্যুত্থানের ফলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা পরে জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে পরিণত হয়। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, দেশটির এক-তৃতীয়াংশ জনগণ বর্তমানে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিন অং হ্লাইংয়ের থাইল্যান্ড সফর তাঁর সরকারের বৈধতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার অংশ। তিনি দেশে ও বিদেশে তাঁর সরকারকে বৈধতা দিতে এবং নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন। তবে সমালোচকরা এটিকে সেনা শাসন টিকিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন।
গত বৃহস্পতিবার মিন অং হ্লাইং ঘোষণা দেন যে, ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পর বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
অনেক দেশ তাঁকে একজন ‘পারিয়াহ’ বা অচ্ছুত হিসেবে গণ্য করে। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে ব্যাপক নিপীড়ন চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যদিও সামরিক বাহিনী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মিন অং হ্লাইংয়ের বিদেশ সফর খুবই সীমিত। তিনি সাধারণত রাশিয়া ও চীনের মতো মিত্র দেশগুলোতেই সফর করেন। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলি রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আহ্বান জানানোর পর তাঁর ভ্রমণ আরও সীমিত হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :