শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম

বিতর্কিত সেই পাপেটের ব্যাখ্যা দিলেন শিল্পী

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম

বিতর্কিত সেই পাপেটের ব্যাখ্যা দিলেন শিল্পী

ঈদ আনন্দ মিছিলে বির্তকিত সেই পাপেট

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত আনন্দ মিছিলের একটি পাপেট বা প্রতিকৃতি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যেটিকে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে ব্যঙ্গ করে তৈরি বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে পাপেটটির শিল্পীর দাবি, এটিতে বিজ্ঞ দার্শনিক নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ঈদের দিনই পাপেটটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে সেটি শেয়ার করে অনেককে নানা ধরনের মন্তব্য ও হাস্যরস করতেও দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার গাধার পিঠে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার বসে থাকার সাথে ঈদের সংস্কৃতির মিল কোথায়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। আলেম শ্রেণির অনেকেই ঈদ আনন্দ মিছিলে জীব-জন্তু সদৃশ প্রতিকৃতি নিয়ে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।

পাপেট শিল্পী ও আয়োজকরা বলছেন, মূলত বাংলা সাহিত্য ও মুসলিম সংস্কৃতির ইতিহাস- ঐতিহ্যকে তুলে ধরতেই আয়োজনে ‘হোজ্জা’ চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ওই পাপেটে। এবং এটি মূলত শিশুদের বিনোদনের উদ্দেশ্যেই বানানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঈদ আনন্দ মিছিলে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার পাপেট

কেউ কেউ গোফ-বিহীন নাসিরুদ্দিন হোজ্জা এবং জামায়াত আমীরের চেহারার মিলের কথাও তুলে ধরলেও সে দাবি খারিজ করে দিয়েছেন পাপেটের মূল শিল্পী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল হক। তিনি বলেছেন, ‘নাসিরুদ্দিন হোজ্জার পাপেট ক্যারেক্টরটি বানানোর জন্য ছবিটি নেয়া হয়েছিল একটি আরবি বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে। প্রচ্ছদের সাথেই নির্মিত ওই পাপেটটির চেহারার অনেক মিল রয়েছে।

সহকারী এই অধ্যাপক বলেন, ‘নাসিরুদ্দিন হোজ্জা ও জামায়াত আমির একই ধরনের ব্যক্তিত্বের লোক না। হয়তো এখানে পোশাকের কারণে এক ধরনের মিল পাওয়া গেছে। এটা এক ধরনের কাকতাল। গায়ের কালো কোট, লাল জুতা, সাদা পাগড়ি সব ওটার সাথেই যায়। তবে, জামায়াত আমিরের সাথে কিছু মিল পাওয়া গেলেও, সেটি যে ইচ্ছাকৃতভাবে ওনাকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে, বিষয়টি একদমই এমন না।’

তিনি আরও বলেন, একই রকম মনে হলেও বা কাউকে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার মতো লাগলেও, সেটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক আলোচনার সুযোগ নেই। আমাদের পরিকল্পনার সময় হাতি ঘোড়াসহ বিভিন্ন কিছু ছিল। কিন্তু আমরা পরে চিন্তা করলাম, শিশুদের জন্য কোন কিছু করা যায় কি না। সেই জায়গা থেকে আরব্য রজনী কিংবা বাচ্চাদের প্রিয় কিছু চরিত্র আমরা যুক্ত করতে চেয়েছিলাম।’

আরবি বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা এই ছবিটির আদলে বানানো হয় হোজ্জার ওই পাপেটটি।

সেই চিন্তার জায়গা থেকে আলাদীন, আলী বাবার চল্লিশ চোর, নাসিরুদ্দিন হোজ্জার মতো শিশুদের প্রিয় চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা শুধুই বাচ্চাদের আনন্দ দেয়ার জন্য করা হয়েছে। এখানে বার্তা দেয়ার কোন বিষয় ছিল না।’

তবে সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল হক বলেছেন, পাপেট তৈরির সার্বিক তত্ত্বাবধানে তিনি থাকলেও প্রতিটি পাপেট তিনি নিজ হাতে বানাননি।

ঈদ আনন্দ মিছিল আয়োজনের মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি)। উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যেও নাসিরুদ্দিন হোজ্জা চরিত্র এসেছে। এটা একটি মেটাফোরিক কারেক্টর। বাচ্চারা এসব পছন্দ করে। যে কারণে এটাকে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। পুরো এই আয়োজনটিকে ঢাকাবাসী ইতিবাচকে নিয়েছে। এটাকে ক্রিটিকালি না দেখে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছে বেশিরভাগ মানুষ।’

এখানে সমালোচনার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাপেট বা প্রতিকৃতি ইসলামি সংস্কৃতিতে যুক্ত করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন খোদ অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। মোগল আমলের কায়দার ঈদ আনন্দ মিছিলে মূর্তি কারা আনল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।

ধর্ম উপদেষ্টা তার ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ঈদ মিছিলে মূর্তি কারা আনল, কারা বৈধতা দিল (অগোচরে ষড়যন্ত্র) সবাইকে ধর্ম অবমাননার দায়ে আইনের আওতায় আনা হবে ইনশাআল্লাহ!

এরপর তিনি একটি হাদিস (বুখারি: ৫৯৫০, মুসলিম: ২১০৯) সংযুক্ত করে লেখেন, রাসূল (সা.) নিজ হাতে কাবাঘর থেকে সব মূর্তি অপসারণ করেছিলেন, যা প্রমাণ করে যে মূর্তি বা ভাস্কর্যের কোনো স্থান ইসলামে নেই।

তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বলছে, এবার ঈদের নানা আয়োজন বাংলাদেশে নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে এবারে যে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথমবারের মতো চাঁদরাতের উৎসব হলো, বা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ঈদ মিছিল হলো, বা বর্ষবরণ উপলক্ষে দুইদিন ব্যাপী সকল জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে যে উৎসব হতে যাচ্ছে- এই সবই অন্তর্ভুক্তিমূলক সাংস্কৃতিক নীতির প্রকাশ। এই দেশটা সবার।’

ঈদ আনন্দ মিছিলের অগ্রভাগে দুই সারিতে ছিল আটটি সুসজ্জিত ঘোড়া। আরও ছিল ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, আর ছিল মোগল ও সুলতানি আমলের ইতিহাস সংবলিত ১০টি পাপেট শো। বড় বড় পাপেট হিসেবে দেখা গেছে আলাদীন, আলী বাবা-চল্লিশ চোর,আর নাসিরুদ্দিন হোজ্জার মতো চরিত্র।

নাসিরুদ্দিন হোজ্জা জনপ্রিয় দার্শনিক এবং বিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কেউ কেউ তাকে মোল্লা নাসিরুদ্দিন নামেও চিনতেন। তার হাস্যরসাত্মক গল্প এবং উক্তিগুলোই তাকে বইয়ের পাতা থেকে মানুষের জীবনে প্রাসঙ্গিক করে স্মরণীয় চরিত্র করে রেখেছে।

আরবি/এসএমএ

Link copied!