উন্নত জীবনের আশায় উচ্চ বেতনের চাকরি খোঁজে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাড়ি জমায় বিদেশে। সেই স্বপ্নের টানে কেউ কেউ হয়ে পড়েন মানবপাচার চক্রের হাতে ‘জিম্মি’।
এমনই এক ঘটনায় গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ‘এফভি কুলসুমা’ নামের একটি নৌকা আটক করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, যাতে ছিল ২২১ জন যাত্রী। তাদের গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়া।
তদন্তে জানা যায়, নৌকায় থাকা যাত্রীদের মধ্যে ১৬৭ জন রোহিঙ্গা, ৪২ জন বাংলাদেশি এবং বাকি ১২ জন দালাল ও মাঝি-মাল্লা। নৌবাহিনীর হস্তক্ষেপে প্রাণে বাঁচলেও তাদের অভিজ্ঞতা ছিল বিভীষিকাময়।
উদ্ধার হওয়া সাতজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দালালদের মাধ্যমে কেউ কেউ বিনা খরচে নৌকায় উঠলেও, মূলত তাদের দাস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। প্রথমে থাইল্যান্ডে পৌঁছে পরবর্তী গন্তব্য মালয়েশিয়া ঠিক করা হয়। স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য চক্রটি অনেককে জিম্মি করতেও প্রস্তুত ছিল।
রোহিঙ্গা যুবক জাহেদ হোসেন জানান, তিনি কাজ না পেয়ে হতাশায় ভুগছিলেন। এক দালালের আশ্বাসে মালয়েশিয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েন। কিন্তু পরে জানতে পারেন তাকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফের ৭ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গা তরুণী নুর কলিমার পরিবার মোবাইলে মালয়েশিয়াপ্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করে। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে থাকতে মালয়েশিয়া যাওয়ার বন্দোবস্ত করেন দালালরা।
আরেক ভুক্তভোগী টেকনাফের কল্যাণপাড়ার বাসিন্দা মো. ইমরান, যিনি একজন নবম শ্রেণির ছাত্র, ফেসবুকে এক দালালের প্রলোভনে পা দিয়ে ঘর ছেড়ে পালান। তাকে প্রথমে একটি পাহাড়ি এলাকায়, পরে সাগরে অপেক্ষমাণ নৌকায় তোলা হয়।
ইমরান জানান, তিন দিনে মাত্র একবার খাবার পেয়েছেন তারা। গাদাগাদি করে দুই শতাধিক যাত্রী নৌকায় ছিল। অনেককে নিচের ঘিঞ্জি অংশে থাকতে বাধ্য করা হয়, যেখানে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা ছিল।
চক্রটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সোমবার রওনা হলে শুক্রবার মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু ভাগ্য ভালো ছিল বলেই তারা ফিরে এসেছে জীবিত, নৌবাহিনীর হস্তক্ষেপে।
এই ঘটনাটি কেবল মানবপাচারের ভয়াবহতা নয়, বরং দারিদ্র্য ও অন্ধ স্বপ্নের নামে প্রতারণার নিষ্ঠুর চিত্রও তুলে ধরে।
আপনার মতামত লিখুন :