ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

’স্বৈরাচারের দোসররা রপ্তানির প্রধান সেক্টরের উপর ভর করেছে’

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪, ০৪:৩৪ পিএম

’স্বৈরাচারের দোসররা রপ্তানির প্রধান সেক্টরের উপর ভর করেছে’

ছবি রুপালী বাংলাদেশ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় গার্মেন্টস শিল্পে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক ঐক্যের সভাপতি এ এ এম ফয়েজ হোসেন। লিখিত বক্তব্য পেশ করেন ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।

আতিকুর রহমান বলেন, স্বৈরাচারের দোসররা তাদের কুচক্রী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এখন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান সেক্টর পোশাক শিল্পের উপর ভর করেছে। পোশাক শিল্প এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। জিডিপিতে পোশাক শিল্পের অবদান প্রায় ১১ ভাগ। পোশাক শিল্পে প্রায় ৪৪ লাখ শ্রমিক সরাসরি সম্পৃক্ত যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী শ্রমিক এবং পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা অন্যান্য বাণিজ্য মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে এই খাতের উপর। এক সময় পোশাক শিল্প ছিল ১ মিলিয়ন ডলারের শিল্প। যা আজকে দাঁড়িয়েছে ৪৬ মিলিয়নে। বাংলাদেশ এখন বিশে^র চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। অর্থনীতিবান্ধব এ শিল্প আরেকটু পরিকল্পিতভাবে গোছানো সম্ভব হলে খুব তাড়াতাড়ি আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে শীর্ষস্থান অধিকার করবে।

তিনি বলেন, আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জাতীয় শ্রমিক ঐক্যের পক্ষ থেকে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। স্বৈরাচার সরকারের পতনের আজ এক মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। আপনারা অবগত আছেন বিগত একমাসে পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসররা ক্ষমতা ফিরে পেতে কীভাবে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। তারা জুডিশিয়াল ক্যু, সনাতন ধর্মালম্বীদের উসকে দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা, আনসার বিদ্রোহসহ বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে প্রতিবিপ্লবে রূপ দেওয়ার নানামুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

আপনারা জানেন গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত জুলুমের শিকার হচ্ছে। বছরের পর বছর তাদের বেতন ভাতা নামকাওয়াস্তে বাড়ানো হচ্ছে। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে কথা বলতে গেলে বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় তাদের উপর পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে সকল আন্দোলনকে স্তমিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিগত দেড় দশকে গার্মেন্টস শ্রমিকের মজুরি যৎসামান্য বেড়েছে। করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে গার্মেন্টস মালিকগণ সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা পেলেও তার ভাগ শ্রমিকরা পায়নি। বরং সে সময়ে চাকরি হারিয়ে হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেকার হয়েছে বলে জানান।

২০২৩ সালে নভেম্বর-ডিসেম্বর নূ্যূনতম মজুরির আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গাজীপুরে নারীসহ ৪জন শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে। একই আন্দোলনে অসংখ্য শ্রমিক মারাত্মক আহত হয়ে কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মিথ্যা মামলার আসামী করা হয়েছে শত শত গার্মেন্টস শ্রমিককে। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদী সরকারের তল্পিবাহক ও আর্শীবাদপুষ্ট ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। যা শ্রমিকরা প্রত্যাখান করেছে।  

তারা জানান, গত ১ সপ্তাহ ধরে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা চলছে। একের পর এক গার্মেন্টস কারখানা মালিকগণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতোমধ্যে আশুলিয়া-সাভার-গাজীপুরের প্রায় দুই শতাধিক গার্মেন্টস কারখানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু কারখানা শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত আন্দোলনে বন্ধ হলেও বেশির ভাগ কারখানা পরিকল্পিতভাবে দুস্কৃতিকারীদের হামলা-ভাংচুরের কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পরিকল্পিতভাবে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের শিল্পখাতকে ধ্বংস করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য দুটি এক. গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংস করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া। দুই. পার্শ্ববর্তী দেশের পরিকল্পনা সফল করা। ফ্যাসিবাদের সরকারের দোসর বিজিএমইএ-এর বিগত নির্বাচনের ভোট ডাকাতির মাস্টার মাইন্ড কিছু নেতা ও তাদের দলীয় স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে গার্মেন্টস শিল্পে অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমাদের প্রতীয়মান হয়।

আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা জনরোষের ভয়ে আত্মগোপনে থেকে শ্রমিক নামধারী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পে অরাজকতা সৃষ্টি করে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা লিপ্ত আছে। এর অংশ হিসাবে তারা কারখানাগুলোতে চাকরির দাবিতে বিভিন্ন বয়সের নারীপুরুষদের পাঠিয়ে ‘চাকরি চাই’ স্লোগান দিয়ে কারখানাগুলোতে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে।

আমরা মনে করি আমাদের দেশের প্রকৃত গার্মেন্টস শ্রমিকরা কোনোভাবেই এ হামলার সাথে সম্পৃক্ত নয়। শ্রমিকরা কখনো তাদের কারখানা বন্ধ হোক তা চায় না। আমরা অবিলম্বে গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংসের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছে এবং যারা ভাংচুরের সাথে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। কারখানাগুলোতে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানায় তারা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি মাহতাব উদ্দীন শহীদ, বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান, বাংলাদেশ অটোরিক্সা হালকাযান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ গোলাম ফারুক, ন্যাশনাল ওয়াকার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জনি, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুন নাহার, বাংলাদেশ দর্জি শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসাইন, বাংলাদেশ প্রগতিশীল নির্মাণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সহ-সভাপতি নুরুল আমিন, বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব তানভীর হোসাইন, বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা ও লোকাল গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মীর মো. জুলহাস প্রমুখ।

আরবি/এস

Link copied!