ঢাকা রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪

জনপ্রশাসনের সংস্কার কমিটি বাতিল ও সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম

জনপ্রশাসনের সংস্কার কমিটি বাতিল ও সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব দাবি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জনপ্রশাসনের গঠিত সংস্কার কমিটি বাতিল ও সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের কাছে তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অতীতে কোন সরকারের সময়ে তাদের এ দাবি না মেনে আরো বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বৈষম্য দূর করতে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা সবাই বৈষম্য সৃষ্টিতে নায়কের ভুমিকা পালন করেছেন। নেতৃবৃন্দ ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার উৎপাটন ঘটিয়ে মতপ্রকাশের সুযোগ তৈরি করতে যারা বুকের রক্ত দিয়েছেন, সেই শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিএস তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন। কর্মকর্তাদের মধ্যে ওমর ফারুক দেওয়ান, আরিফ হোসেন, মফিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, জামিলুর রহমান,ড. মো. আহসান হাবিব মোসাম্মাত নূর এ জান্নাত উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে ২৫ ক্যাডারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ দেশের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে ২৫টি ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারে প্রায় ৫৩ হাজার কর্মকর্তা চাকরি করেন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জনসেবা এ ২৫টি ক্যাডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে শুধু একটি ক্যাডারের প্রতিনিধি দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয়। নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে তাদের উত্থাপিত তিনিটি দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানান। দাবিগুলো হচ্ছে- বিদ্যমানজনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মাধ্যমে সকল ক্যাডারের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিভিল সার্ভিসের বাইরে জনপ্রশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাডার কর্মকর্তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। এ প্রসঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খার কথা উল্লেখ করে বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা শুধু নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সেটা ছিল একটা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। বাংলাদেশে যেন আর কোনোদিন, কখনও যেনো ফ্যাসিবাদী শাসন জাঁকিয়ে বসতে না পারে, সেটা রোধ করতে কী কী সংস্কার প্রয়োজন সে লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কমিশন কাজ করবে বলে তিনি জানান। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের পরামর্শ সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সংস্কার কমিশনের কর্মপদ্ধতির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজুল আলম বলেন, দেশের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ ছিল। এখন জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি যেমন আছে, তেমনি গত ১৫ বছরে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো জনগণের স্বার্থে কাজ করতে পারছে না। এগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে মনির হোসেন বলেন, জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠনে ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলাম। পরবর্তীতে সকল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের সাথে সাক্ষাৎকারের জন্য আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ লিখিত আবেদন জানায়। ইতোমধ্যে পাঁচজন সম্মানিত উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। কেমন জনপ্রশাসন হওয়া উচিত- দীর্ঘদিন সিভিল প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতায় আমরা উপদেষ্টাম-লীর সামনে লিখিতভাবে উপস্থাপন করি এবং সকলেই আমাদের দাবিকে যৌক্তিক বলে মতামত প্রদান করেন।

বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ইতোপূর্বে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, সেগুলো তাঁদের দিয়েই করা হয়েছিলো, যারা নিজেদের সুবিধার্থে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করেছেন। অতীত অভিজ্ঞতা এবং অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে আমরা সকলকে অবগত করেছিলাম যে, এবারও তেমন কমিটি গঠন হতে পারে। বিষয়টি খেয়াল রেখে সকল পেশার সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত  করে কমিটি গঠনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করি। সেই সাথে সকল পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ২৫টি ক্যাডারের সদস্যদের সংগঠন ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-কে অন্তর্ভুক্ত করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি করতে সকল উপদেষ্টাকে লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। সাক্ষাতে বিষয়টি উপস্থাপন করলে উপদেষ্টাম-লী আমাদেরকে আশ্বস্তও করেছিলেন। আমরাও আশা করেছিলাম, প্রকৃত জনসেবা ব্যবস্থাপনায় প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীর মতামতের ভিত্তিতে এবার একটি আধুনিক জনসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুযোগ হবে।

তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলাম ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ যে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, সেখানে ২৫টি ক্যাডারের কোনও সদস্য নেই। বরং কমিশন প্রধানসহ ছয়জন সদস্য একটি ক্যাডারের, যারা সিভিল প্রশাসনের বৈষম্য সৃষ্টিকারী। এছাড়া ইতোপূর্বেও বৈষম্য নিরসনে তাদেরকে দিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছিলো, এবং তারা সেই সুযোগে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরা বলা হয়, বিগত ১৫ বছরে যারা জনপ্রশাসনে থেকে ভোটারবিহীন নির্বাচনে সহযোগিতা করেছেন, যারা এদেশের জনসেবা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছেন নিজস্ব স্বার্থে, যারা প্রশাসন ব্যবস্থাকে চরম কেন্দ্রীভূত করে সকল ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করেছেন, তাদেরকেই কমিশনের সদস্য করা হয়েছে; যেনো এদেশের উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য ব্যতীত আর কারো কোনো ভূমিকা নেই। এ কারণেই স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে জনসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি।বস্তুত বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় পেশাদারত্বের কোন মূল্য দেওয়া হয়নি, এখনো হচ্ছে না। একটি ক্যাডার যাদের প্রকৃত কাজ ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনা, কালের প্রবাহে চানক্য-নীতি অবলম্বন করে, আজ তারা পুরো প্রশাসন ব্যবস্থা গিলে ফেলেছেন। নিজেদের মূল দায়িত্ব ফেলে আজ তারা সকল ক্যাডারের মধ্যে কর্তৃত্ববাদের নীতি গ্রহণ করেছেন। নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে জনপ্রশাসনের গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি বাতিল ও সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান।

আরবি/এফআই

Link copied!