ঢাকা রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ

চাওয়া-পাওয়া নিয়ে যা বলছে রাজনৈতিক দলগুলো

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম

চাওয়া-পাওয়া নিয়ে যা বলছে রাজনৈতিক দলগুলো

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ জানতে চেয়েছে বিএনপি। শনিবার (০৫ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, সংলাপে নির্বাচন সংস্কার, রোডম্যাপ দিতে বলেছি। ইউনিয়ন পরিষদ বাতিলের দাবি জানিয়েছি। প্রশাসন থেকে স্বৈরাচারের নিয়োগকৃত দোসররা এখনো রয়েছে। তাদের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই তাদের অবিলম্বে সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে বসানোর কথা বলেছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডিসি নিয়োগে যে দুর্নীতির খবর প্রকাশ হচ্ছে তা উদ্বেগের। আমরা নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কথা বলেছি। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও শেখ হাসিনার পতনের পর যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে এবং গ্রেপ্তার হচ্ছেন তাদের আবারও জামিন দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি। দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার ও নিশ্চিতকরণে প্রস্তাব করেছি।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা’ অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

এছাড়া প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করারও আহ্বান জানিয়েছে দলটি। প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের অনেক দোসর কর্মরত আছেন জানিয়ে তাদের অপসারণ, জেলা প্রশাসক নিয়োগে নতুন ফিট লিস্ট এবং যেসব জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ বাতিল, ফ্যাসিবাদের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দু-একজন আছেন যারা বিপ্লব-গণঅভ্যুত্থানের যে মূল স্পিরিট তাকে ব্যাহত করছে, তাদের সরানোর কথা বলেছি। আমরা গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতিবঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য বলে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা একটা রোড ম্যাপ দিতে বলেছি। নির্বাচন কমিশন কবে নির্বাচন করবে সে ব্যাপারে একটা রোড ম্যাপ দিতে বলেছি।

মির্জা ফখরুল সংলাপের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, আমরা এনআইডি কার্ড যেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করতে আইন করা হয়েছিল সেটাকে অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাতিল করতে বলেছি।

তিনি বলেন, বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিশনে না যায় সে কথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমরা বলেছি যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনারসহ ছিল তাদের ভুয়া ও ব্যর্থ নির্বাচন, পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করার অভিযোগে তাদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি।

বিএনপির পর অন্তবর্তী সরকার প্রধানের সাথে সংলাপ করেছে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ। জামায়েতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি, তারা একটা ভোটের পরিবেশ তৈরির জন্য এসেছে। তাদের নানা রকম সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে আগামী ৯ অক্টোবর রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হবে। নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

শনিবার বিকেল ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াত আমির বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই সরকার নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেবে জাতিকে। আমরা সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই, সেটা কতদিনের সেটা আমরা জানাব।

জামায়াত সরকারকে দুটি রোডম্যাপ দিয়েছে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, একটি সংস্কারের, অন্যটি নির্বাচনের। ভোটের আগে সংস্কার চায় জামায়াত। আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। এজন্য অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত ৩টা নির্বাচনে জাতি বঞ্চিত হয়েছে। আগামীতে জাতির সামনে একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া মূল কাজ। সেজন্য মৌলিক বিষয়ে তাদের কিছু সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করা উচিত সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।

জামায়াত আমির বলেন, জনগণ এবং সরকার একসঙ্গে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে পারে, সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আমরা আশা করছি, বর্তমান যে সরকার আছে তারা কোনো ধরনের পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য করণীয় কী এমন একটি প্রশ্ন এসেছিল। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। জনগণের সঙ্গে সরকারের পার্টনারশিপ লাগবে। জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ যদি একসঙ্গে কাজ করে একটা অভূতপূর্ব দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মের ভাইবোনরা উদযাপন করতে পারবেন।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের জামায়াতের প্রতিনিধি দল যমুনায় প্রবেশ করে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, আ ন ম শামসুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

পরে গণঅধিকার পরিষদের সাথে সংলাপ করেন অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। সংলাপ শেষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে তাই এই পরিস্থিতি উন্নতির দিকে নজর দিতে হবে সরকারকে। শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে ভালোভাবে শেষ হয়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পোশাক শিল্পের অস্থিরতা কমাতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রশাসনে সংস্কার খুব জরুরী ফ্যাসিবাদি সরকার যেন আর ফিরে আসতে না পারে তার জন্য।

আর গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, সরকার ও রাজনৈতিক দলের দূরত্ব যেন তৈরি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে বর্তমান সরকারকে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয়েছে তাকে অবশ্যই জনগনের আকাঙ্খা পূরণ করতে হবে।

আরবি/এফআই

Link copied!