ঢাকা বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পর ইসি গঠন করতে চায় সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম

সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পর ইসি গঠন করতে চায় সরকার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

তিনধাপে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ এবং সংস্কার কমিশনের সুপারিশে নতুন আইন প্রণয়নের পর ইসি গঠন করতে চায় সরকার। এমন মন্তব্য করেছেন নৌ উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. সাখাওয়াত হোসেন। আর নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রধান বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন।

শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সকাল ১০টায় নির্বাচন কমিশনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি(আরএফইডি)-এর আয়োজনে ‘কেমন সংস্কার চাই’ শিরোনামে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক মতানৈক্য রয়ে গেছে এখনও। এই সংকট দূর না হলে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবার চাইতে অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

বক্তারা বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের উচিত সবপক্ষের সাথে আলোচনা করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন প্রস্তাব দেয়া যেন পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি না হয়। এসময় সংখ্যানুপাতিক আসন বন্টন করে নির্বাচন নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মত দেন কেউ কেউ।

নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনরায় ভোট করতে হবে বলে মত দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালে চুইংগামের মত কাস্টিং বাড়িয়ে ভোট দেখানো হয়েছে ৪০ শতাংশ। সংসদ সদস্যদের বেতন বাড়াতে হবে। দশ লাখ টাকা বেতন দিতে হবে।

এই ধরনের সংলাপে ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করায় তীব্র নিন্দা জানান ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।

এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সুষ্ঠু নির্বাচন করার আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী। তিনি বলেছেন, দলগুলো যখন চায় আমি ম্যানিপুলেট করব, তাহলে তা করা যায়। প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, বাংলাদেশে যে সংকট রয়েছে সে সংকট নির্বাচনকেন্দ্রিক। তিনি বলেন, বিশেষ পরিস্থিতির কারণে উচ্চ আদালতের রেফারেন্সে এই সরকার গঠিত হয়েছে, যার ফলে এটা একটা সাংবিধানিক সরকার। নবম সংসদ নির্বাচন ম্যানিপুলেটেড নির্বাচন জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বই পড়লে বোঝা যাবে, কীভাবে জেনারেল মঈনের হাতে সাতটি ঘোড়ার  লাগাম ধরিয়ে দিয়েছিল।

নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং কমিশন গঠনের ক্ষমতা অন্তবর্তী সরকারের হাতে দাবী করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে দেয়া হবে, চূড়ান্ত করবে সরকার। তবে ছলে বলে কৌশলে রাজনৈতিকদলগুলো কমিশনকে কব্জা করে নিলে সুষ্ঠু নির্বাচন অধরাই থেকে যাবে।  

সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা যাদের নিয়োগ দেয়া হবে তাদের অনিয়মের বিচারের চুড়ান্ত ক্ষমতা থাকা উচিত। আগের নিয়মে ইসি গঠন না করে আইনপাশ করে নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের বস্ত্র, পাট ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মনে করেন, সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পড়েছে । অনেক জায়গায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কাজেই দায়দায়িত্ব এখন থেকেই শুরু। অনেক রক্ত ঝরেছে। ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তারা বলেছে কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই আমরা যদি ঠিক করতে না পারি তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি হবে। নির্বাচনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে ভোটের সময় মন্ত্রনালয়কে ইসির আওতায় রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

এই উপদেষ্টা বলেন, ডিসিরা নির্বাচন করে এই কথা ঠিক না। আইনে ৩০০ আসনে ৩০০ রিটার্নিং অফিসার দেওয়া যাবে। আবার ডিসিদের দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। নির্বাচন কমিশনকে ভোটের সময় সরকারের ওপর কিছুটা খবরদারির এখতিয়ার দিতে হবে। তিন ধাপে ইসি নিয়োগ করা যেতে পারে। তৃতীয় ধাপে পার্লামেন্ট থেকে চূড়ান্ত প্রস্তাব যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রথম ধাপে সকলের নামই প্রকাশ করা হবে।

তিনি বলেন, দলের প্রার্থী হতে হলে দলের প্রাথমিক সদস্য পদে অন্তত তিন বছর থাকতে হবে। তৃণমূলে এক দুই বছর থেকে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এছাড়া নারী প্রার্থী ৫০ জন বা ১০০ জন, যাই করেন সেটা সরাসরি নির্বাচন করেন। সংরক্ষিত আসনে নারীদের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। তবে এটা করবেন কি না সেটা আপনারা রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরবি/এফআই

Link copied!