ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম

সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি

ছবি: রুপালী বাংলাদেশ

সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিত এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ না করে বরং ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ও পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে দ্বীপটির জীব বৈচিত্র রক্ষার দাবি জানিয়েছেন দ্বীপবাসী ও পর্যক সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাতের অংশীজনরা।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান তারা।

তারা বলেন, যদি সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার এক তরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিত ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করে তবে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এসময় তারা দ্বীপের জীব বৈচিত্র রক্ষায় বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পর্যটন শিল্পের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন ট্যুর অপারেটরস আহসাসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর মোহাম্মদ রাফিউজ্জামানসহ আরো অনেকে।
টোয়াব প্রেসিডেন্ট বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমাদের দেশের অন্যতম আকষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটক এ দ্বীপে ভ্রমণ করে ও রাত্রে অবস্থান করে এর সৌন্দর্য উপভোগ করে। দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট সেন্টমার্টিনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশের দ্বীপগুলো উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পর্যকদের জন্য উন্মোক্ত করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে বিপরীত চিত্র। আমাদের পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সেন্টমার্টিন দ্বীপকে কেন্দ্র করে যে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠেছে তার প্রসার না করে বরং গলাটিপে মেরে ফেলার উদ্যোগ নিতে চায় সরকার। যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।

সংবাদ সম্মেলনের সভাপতি সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা উন্নয়ন জোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সদস্য শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত পথ নির্ধারণ করে লাখো মানুষের জীবনজীবিকা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দ্বীপে প্লাস্টিকমুক্ত এলাকা ব্যস্তবায়ন অথবা দ্বীপের প্লাস্টিক বর্জ রিসাইকেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অক্টোবরের শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিতে হবে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিষয়ে যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বীপবাসী এবং সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সেন্টমার্টিনে পরিবেশবান্ধব বোতলজাত পানির কারখানা স্থাপন অথবা পরিবেশবান্ধব পানির বোতল ও পানির পাত্র সংশ্লিষ্ট পরিবেশ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে সরবারাহের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে সেন্টমার্টিনে বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে। তিনি সেন্টমার্টিন বিষয়ে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের গৃহীত সব দেশবিরোধী ও পর্যটনবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি করেন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের সিন্বাদ রিসোর্ট এক্সপেরিয়েন্ট এন্ড বিয়ন্ড এর স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিত এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করলে হাজার হাজার মানুষের জীবন, জীবিকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়নমুখী জীবনের ধারা বিপর্যস্ত হবে। এতে মানবিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বীপবাসির জীবন জীবিকা রক্ষার স্বার্থে দ্বীপের সকল পর্যটন স্থাপনাকে অপসারনের পরিবর্তে পর্যটন শিল্পকে চলমান রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

যথা সম্ভব দ্বীপের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করে সে  অনুযায়ী পর্যটন কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলেই এই দ্বীপ এর অধিবাসী এবং সংশ্লিষ্ট সবার উত্তরোত্তর উন্নয়ন ঘটবে।

টোয়াব পরিচালক ইউনুস আলী বলেন, পর্যটকদের সুবিধার্তে বিনিয়োগ বাড়ানো, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানসম্মত সাপোর্ট সার্ভিস এবং দেশে- বিদেশে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর জন্য আরো বেশী মনোযোগী হওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণ করে বছরের মাত্র চার মাস, বাকি সময়টাতে সরকার চাইলে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়না। সব আলোচনা শুধু পর্যটন মৌসুমেই শুরু হয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারলে কক্সবাজারের পাশাপাশি এই দ্বীপ দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নূরুল আলম, সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোটের নেতৃবৃন্দ, ই-ট্যুরিজম এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ট্যাব) এর নেতৃবৃন্দ, সেন্টমার্টিন দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, সেন্টমার্টিন হোটেল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বোট মালিক সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ, মৎসজীবী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ স্লি-পার এসি বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দ।

আরবি/জেআই

Link copied!