ঢাকা: মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত দুই স্টেশন শীঘ্রই চালু করা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া স্টেশনটি চালু করার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে মিরপুর-১০ স্টেশনটিও চালু করার ব্যাপারে ভাবছে ডিএমটিসিএল।
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে কাজীপাড়া স্টেশনটি চালু করা হতে পারে। তবে মিরপুর-১০ স্টেশনটি চালু করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। সরকার পতনের আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় এ দুটি স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল স্টেশন দুটি মেরামত করে চালু করতে এক বছর লেগে যাবে। স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারও চালানো হয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষের ঘটনায় কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গত ১৮ই জুলাই থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় মেট্রোরেল। তবে গত ২৫শে আগস্ট ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন বাদে চালু করা হয় মেট্রোরেল। তাই এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে স্টেশন দুটি।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, মিরপুর-১০ স্টেশনের চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাজীপাড়া স্টেশন। কাজীপাড়া স্টেশনের একপাশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য পাশ সুরক্ষিত রয়েছে। তবে মিরপুর-১০ এর পুরো স্টেশনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আপাতত কাজীপাড়া স্টেশনের ক্ষতিগ্রস্ত উপকরণগুলো অন্য স্টেশন থেকে ধার করে চালু করার বিষয়ে ভাবছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কোম্পানি।
এছাড়া মিরপুর-১০ স্টেশন দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকেও জোর দেয়া হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, মেট্রোরেলের স্টেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো প্রোপ্রাইটর আইটেম। এসব উপকরণ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিস্টেম ও ডিজাইন করা হওয়ায় অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওয়া যায় না।
মেট্রোরেলের দু’টি স্টেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাড়া আদায়ের সিস্টেম। তবে এখন পুরো সিস্টেম কেনা লাগবে না। শুধু ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতিগুলো প্রয়োজন। তাই যাত্রী চাহিদার কথা বিবেচনা করে এখন যেসব স্টেশনে তুলনামূলক কম যাত্রীর চাপ রয়েছে সেসব স্টেশন থেকে কিছু যন্ত্রপাতি এনে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন চালু করা হবে। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সবগুলো স্টেশন ব্যবহার করতে পারবে যাত্রীরা।
ডিএমটিসিএল’র এক কর্মকর্তা বলেন, মতিঝিল, সচিবালয়, মিরপুর-১০ ও উত্তরা উত্তর স্টেশনে যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি। এই স্টেশন দিয়ে ৩০-৪০ হাজার যাত্রী দৈনিক যাতায়াত করে। তাই আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করতে চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, আমরা দ্রুতই চালু করতে চেষ্টা করছি। আমি এখনো টিমের সঙ্গে বসিনি। বসলে ফিডব্যাক পাবো। তারা কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত চালু করা যাবে।
তবে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করেছিলেন, মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত দুটি স্টেশন আগামী এক বছরেও চালু করা সম্ভব হবে না। গত ২৭শে জুলাই সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এটা এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না বলে এক্সপার্টরা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেছিলেন, মেট্রোরেলের ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনগুলোর কাজ দ্রুত ঠিক করা যায়। কমলাপুর পর্যন্ত লাইন বাড়ানো হচ্ছে। সেখানে এই ধরনের স্টেশনের উপকরণ পাইপলাইনে আছে। এটাকে ওই জায়গায় না লাগিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :