ঢাকা: অবশেষে ফ্যাসিবাদের দোসর গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথকেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হলো। তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন এবং পদোন্নতির ক্রমে তার নাম ছিল শীর্ষে।
প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার দৌড়ে ক্রমানুসারে আরও চারজন ছিলেন। তারা হলেন শেখ মুজাক্কা জাহের, কে এম জুলফিকার আলী, এনামুল হক ও আব্দুর রশিদ মিয়া।
সদ্য বিদায়ী প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন ১৭ অক্টোবর অবসর-পূর্ব ছুটিতে গেলে পদটি শূন্য হয়। এর এক মাস আগে থেকেই প্রধান প্রকৌশলীর এই লোনীয় পদ কব্জায় নিতে দৌড়ঝাঁপ চলছিল। চলছিল জোর লবিং।
এলজিইডির পদোন্নতিরে ক্ষেত্রে ক্রম ভাঙার নিয়ম না থাকলেও গ্রুপিং-লবিং কিন্তু থেমে ছিল না। কারণ, ক্রমের শীর্ষ থেকে যিনি প্রধান প্রকৌশলীর পদে অধিষ্ঠিত হলেন, তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং রীতিমতো পদ-পদবি ধারণ করেই। অর্থাৎ, তিনি ফ্যাসিবাদের কট্টর দোসর ছিলেন।দ্বিতীয় ক্রমে যিনি রয়েছেন, শেখ মুজাক্কা জাহের তিনিও ফ্যাসিবাদের ঘনিষ্ঠ দোসর হিসেবে পরিচিত।
সুতরাং, ক্রমানুসারে আরও যে তিনজন আছেন, তারা ধরেই নিয়েছিলেন এবার ক্রম ভেঙে ব্যতিক্রম কিছু ঘটবে। কিন্তু শেষমেশ হলো না। ক্রম ঠিক রাখতে গিয়ে ফ্যাসিবাদের ভয়ানক দোসরকেই পদোন্নতি দিয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হলো। তার চাকরির কার্যকালও স্বল্পতম, মাত্র ৩ মাস ১০ দিন। হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩১ জানুযারি তার অবসর-পূর্ব ছুটিতে যাওয়ার কথা।
খোঁজ নিয়ে যত দূর জানা যায়, নবনিযুক্ত প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ একজন কট্টর আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের এলজিইডি শাখার সহসভাপতি। এ ছাড়া তিনি কানে কম শোনেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তিনি বেশ কয়েক দিন ভয়ে অফিসে যাননি।
অভিযোগ আছে, তিনি আওয়ামী শাসনামলে শেখ সেলিম ও শেখ হেলালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং লিটন চৌধুরী ও শাজাহান খানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে কাজ করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর গোপালগঞ্জ জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তিনি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ রাখতেন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আগপর্যন্ত তিনি প্রায়ই শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, লিটন চৌধুরী ও শাজাহান খানের বাসায় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেনকে নিয়ে মিটিং করেছেন।
তিনি ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং আন্দোলনের শহীদদের কখনো স্বীকার করেন না, যার কারণে গণঅভ্যুত্থানের পর কোনো প্রোগ্রামে ও মিটিংয়ে বিষয়টি অ্যাড্রেস না করে সব সময় কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে এলজিইডিতে সবাই বিব্রত।
জানা যায়, তিনি আওয়ামীপন্থী অফিসারদের নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন এবং আওয়ামীপন্থী অফিসারদের নিয়ে প্রায়ই গোপন মিটিং করেন। তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগে কর্মরত আওয়ামীপন্থী অফিসারদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।
এলজিইডি-সংশ্লিষ্ট মহল জানায়, গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথকে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী করায় আওয়ামীপন্থী অফিসারগণ আরও সক্রিয় হবেন। এতে এলজিইডির কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হবে, এলজিইডি একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে।
আপনার মতামত লিখুন :