ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত

হাসপাতালের মর্গে ২১ জনের লাশ

আজিজুল হাকিম, ঢামেক

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম

হাসপাতালের মর্গে ২১ জনের লাশ

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল , শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পরিচয়হীন ২১ জনের মরদেহ পড়ে আছে। এ মরদেহগুলো কোটা সংস্কার আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে সহিংসতার সময় এসব লাশ হাসপাতালে জমা হয়। 

জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ শিক্ষার্থী, পথচারী, ব্যবসায়ী, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মৃত্যু হয়। কিছু লাশ তাদের পরিবার-পরিজন ও স্বজনরা মরদেহগুলো মর্গ থেকে নিয়ে যান। এরমধ্যে পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় কিছু মরদেহের দাবিদার কেউ না থাকার কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ১৭টি এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ৩ টি ও মিডর্ফোড হাসপাতালে ১ টি মরদেহ পড়ে আছে। মোট ২১ টি লাশ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে।

এদিকে মর্গে লাশ রাখার ফ্রিজ ভালো না থাকার কারণে এগুলো সংরক্ষণ করে রাখাও যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ। মর্গে পড়ে থেকে ইতিমধ্যে লাশগুলো বিকৃত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

কতৃপক্ষ বলছে, এরমধ্যে কোনোটি নিহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে, আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনার পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। মরদেহগুলো হাসপাতাল মর্গে রাখা হলেও তাদের খোঁজ নিতে এখনো কেউ আসেনি।

‘পুলিশ না থাকায় সুরতহাল প্রতিবেদনও আটকে আছে। যার কারণে এসব লাশের বিষয়ে সিধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত করতে গেলে পুলিশ প্রতিবেদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরকার পতনের পর থেকে বিভিন্ন থানায় এখনো পুলিশ পুরোদমে কাজ শুরু করেনি, ফলে সুরতহাল প্রতিবেদনও করা যাচ্ছে না।’

ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সরকারের পতনের পরের ৩ দিন হাসপাতালে গুরুতর আহত অনেককে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। আবার কয়েকটি মরদেহ মৃত্যুর দুই-তিন দিন পরও রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে আনা হয়, এসব পড়ে থাকা মরদেহের মধ্যে পুড়ে যাওয়া বডিও রয়েছে। এসব মরদেহ এমনভাবে বিকৃত হয়েছে যে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতেও পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

সূত্র জানায়, হাসপাতাল ও কলেজের মর্গে এখন যে মরদেহ পড়ে আছে, সেখানে কোনো শিক্ষার্থী নেই। তবে ৩ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরে যারা রয়েছেন, তারা প্রাপ্তবয়স্ক।

ঢামেক হাসপাতাল মর্গের ইনচার্জ রামু চন্দ্র দাস বলেন, মর্গে মরদেহগুলো চার-পাঁচ দিন ধরে পড়ে রয়েছে। লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে রাখা হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী গোলাম মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৭টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি, তবে শেষ পর্যন্ত যদি শনাক্ত করা না যায় কিংবা মরদেহ কেউ দাবি না করে তবে ডিএনএ স্যাম্পল রেখে মরদেহগুলো আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দিয়ে দেওয়া হবে। কেউ যদি মরদেহ দাবি করতে আসেন তাহলে যেন ডিএনএ টেস্ট করে মেলানো যায়।’

ঢাকায় যখন ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে তখন রোগীদের ভিড় জমেছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। এখানে কমপক্ষে ৬৫০ জন রোগী আহত হয়ে চিকিৎসা নেন, যার মধ্যে ২২০ জন গুরুতর আহত ছিলেন। গতকাল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কোটা আন্দোলনে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে চিকিৎসা নিতে আসা ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মর্গে রাখা হয়েছে, বাকিগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে এখনো অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মো. শফিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে লাশ রাখার ফ্রিজারগুলোতে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিজিং করে রাখা সম্ভব নয়। হাসপাতালের মর্গে এখনো ৩টি মরদেহ রয়েছে। আমরা তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারিনি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের মরদেহ থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে, তারা পরিচয় শনাক্ত করতে পারে কি না সেটা দেখা হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এ পর্যন্ত কলেজ মর্গে এবং হাসপাতাল মর্গে ৮ জন ও হাসপাতাল মরগে ৯ জনের লাশ পড়ে আছে। এ পর্যন্ত তাদের আত্মীয়-স্বজন কেউ আসেনি। 

সংশ্লিষ্টরা বলছে, কোটাক সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ কর্মবিরতি পালন করে এরপর এই লাশগুলো পড়ে থাকে। পুলিশকে তদন্ত ছাড়া লাশ আঞ্জুমান মফিদূলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এই বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের দায়িত্বরত সহকারী রাজু দাস বলেন, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল ও কলেজ মর্গে ১৭টি লাশ অজ্ঞাত হিসেবে পড়ে আছে। কেউ কেউ আসছে লাশ দেখে তারা চিনতে পারছেন না। এদিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গের সহকারি জ্যোতিষ বলেন, আমাদের হাসপাতালের মর্গে ৩ জনের অজ্ঞাত লাশ পড়ে আছে। পুলিশি তদন্ত ছাড়া এসব লাশ কোথাও দেওয়া যাচ্ছে না। 

মিডফোর্ড হাসপাতালের মর্গের সহকারী রমেশ বলেন, মিটফোড হাসপাতালে আজ ১০ থেকে ১৫ দিন হলো একটি লাশ মর্গে পড়ে রয়েছে। যার কোনো আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর জানা যায়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, নিহতদের আরো কয়েকদিন রাখা হবে । তারপরও যদি তাদের পরিচয় না মিলে তাহলে অবশেষে পুলিশ বে ওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমাল মফিজুল ইসলামের কাছে হস্তান্ত করা হবে এবং তাদের মাধ্যমে দাফন করা হবে।
 

আরবি/জেডআর

Link copied!