ঢাকা: মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মি মাছ ধরার সময় নাফ নদী থেকে ২০ বাংলাদেশি জেলেকে জিম্মি করেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া, টেকনাফ উপজেলার নাইক্ষ্যংদিয়ার কাছে নদীর মোহনা থেকে ১৫টি ছোট কাঠের নৌকা আটক করেছে তারা।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বরন) সন্ধ্যায় নাফ নদী থেকে তাদের জিম্মি করে আরাকান আর্মি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানান, নাইক্ষ্যংদিয়ার কাছে প্রায় ১৫টি নৌকা নিয়ে মাছ ধরছিলেন জেলেরা। শাহপরীর দ্বীপের জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আরাকান আর্মি।
জেলেরা সবাই টেকনাফের বাসিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, তারা ইতিমধ্যে বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জানিয়েছেন।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা রোহিঙ্গাদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
এর আগে ৯ অক্টোবর সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশ থেকে ৫৮ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের নৌবাহিনী।
তখন মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে এক জেলে নিহত ও দুজন আহত হন।
পরদিন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিহত একজনের লাশসহ দুটি পৃথক দলে জেলেদের ফেরত দেয়।
মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষ
এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে।
জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইন আন্দোলনের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত সামরিক শাখা আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়।
আরাকান আর্মি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর একটি জোটের সদস্য। তারা সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কৌশলগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে।
মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একত্রে কাজ করে আরাকান আর্মি। এই জোট ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই অভিযান মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। তখন সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের ফলে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
পরবর্তীতে সংঘর্ষের কারণে কয়েক দফায় আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সম্প্রতি ৪০ হাজারের বেশি মিয়ানমারের নাগরিকের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
১৬ অক্টোবর বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও সোয়ে মোয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সূত্র, ভয়েস অফ আমেরিকা
আপনার মতামত লিখুন :