জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ৭ নভেম্বরের চেতনা ও ছাত্র-জনতার ৫ আগস্টের বিপ্লব একসূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে এ জাতির প্রতি, এই উম্মার প্রতি পরীক্ষার পর পরীক্ষার মধ্যদিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশের অভিযাত্রা, নতুন দিগন্ত আল্লাহ তাআলা সূচনা করেছেন। এবারের ৭ নভেম্বর আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে, এমন একটা সময়ে উদযাপন করছি, যখন আধিপত্যবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি গণবিপ্লব সংগঠিত করেছে।’
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের কার্যালয়ের হল রুমে ‘৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে আধিপত্যবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সিপাহী জনতার সফল বিপ্লব সংঘটিত হয়। সেদিন ‘নারায়ে তাকবির’, ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে ইসলামী মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। একদলীয় শাসনের পরিবর্তে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। দেশে পতিত আওয়ামী গোষ্ঠী আবারও ক্ষমতায় এসে আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত করে, গণতন্ত্র নির্বাসিত করে দেয় ও মানবাধিকার বিপন্ন করে তোলে, ভোট ও ভাতের ন্যায্য অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করে।’’
দীর্ঘ ১৫ বছরে গুম, খুন, ধর্ষণ মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারকে সমূলে উৎখাত করেছে। এখন দেশে গণতন্ত্র ও দেশের মানুষকে পূর্ণভাবে মুক্ত করতে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রয়োজন আরেকটি বিপ্লব, যা এই জাতির ভবিষ্যৎ রচনা করবে। ৭ নভেম্বর একনায়কতন্ত্র, শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে যেভাবে দেশের মানুষ সম্মিলিতভাবে গর্জে উঠেছিল, একইভাবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা সব আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করেছে।’
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে। ক্ষমতার অপব্যহার করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সংকুচিত করে, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ জনগণের সব মৌলিক অধিকার হরণ করেছিল মুজিব সরকার। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের চেতনা মূলত আধিপত্যবাদী ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের চেতনা।’
তিনি বলেন, ‘বিপ্লব-সংহতির মাধ্যমে ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর আধিপত্যবাদকে পরাভূত করে দেশপ্রেমিক সিপাহী-জনতা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছিল। যেমনিভাবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা আবারও দেশকে রক্ষা করেছে। আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেশবাসীকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ জামায়াতের কাছে আমানত। দেশের জনগণকে রক্ষা করতে যদি রক্ত লাগে, দেশের জন্য জীবন দিতে হয়, আমরা প্রস্তুত।’
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো. দেলোয়ার হোসেন, মু. কামাল হোসাইন ও ড. মোহাম্মাদ আব্দুল মান্নান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ড. মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :