চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩টার দিকে পটিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সজল দাশ প্রকাশ এ্যাপোলো নামের একব্যক্তির গোয়াল ঘর থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি উন্নতজাতের গরু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতদল।
২ নভেম্বর রাত ১টায় উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই গ্রামের তৌহিদুল আলমের মুদির দোকান থেকে মালামাল লুট হয়ে যায়। একই দিন রাতে উপজেলার জঙ্গলখাইন উজিরপুর গ্রামে গরু চুরির কাজে বাঁধা দেওয়ায় চোরের দল স্থানীয় লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে।
এসময় আবদুল হক (৪৮) ও রাজু (২৪) নামের দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। ৪ নভেম্বর উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের নিমার্নাধীন একটি পোষাক শিল্প কারখানায় দুর্ধর্ষ ঘটনা ঘটেছে। চোরের দল এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মো. সেলিম (৪০), নুর মোহাম্মদ (৫৮), নৈশ প্রহরী মো. মুনা (৪০), মো. আহাদ (২০), মো. বাবু (২১), মো. জায়েদ (১৯), মো. করিম (৩০) কে রশি দিয়ে হাত বেঁধে তাদেরকে মারধর করে প্রায় ২২ লাখ টাকার মালামাল ২টি পিকআপে করে নিয়ে যায়। ৫ নভেম্বর রাত ১টার দিকে পটিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে ঘরের তালা ভেঙ্গে স্ট্রিলের আলমিরা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণ চুরি করে নিয়ে যায়।
৮ নভেম্বর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের খরনা রেলস্টেশন বাজারে একটি গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদল বাজারের নৈশপ্রহরী নাছির উদ্দিন (৬৫), আবদুল গণি (৬৫) ও দোকান কর্মচারী মো. হাসানের (৩২) হাত-পা বেঁধে স্বর্ণের দোকানসহ ৪টি দোকানের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
একইদিন বিকেলে পটিয়া থানাহাট থেকে মো. সোলেমান নামের এক সিএনজি চালকের গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটে। ১০ নভেম্বর রাতে পটিয়া থানার মোড় বিসমিল্লাহ ব্যাটারি হাউজ থেকে কয়েক লাখ টাকার ব্যাটারি চুরি হয়ে যায়। সর্বশেষ ১২ নভেম্বর উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের হুলাইন ছালেহ নুর ডিগ্রী কলেজের সম্মুখে এআরএইচ এগ্রো খামার থেকে ১৯টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যান। ২২ জনের একটি ডাকাতদল খামারের প্রহরী আবদুল মান্নান (৪২) কে চোখ বেঁধে মারধরও করেন।
এইভাবেই চট্টগ্রামের পটিয়ায় বেপরোয়া গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। প্রায় রাতেই উপজেলার কোথাও না কোথাও এই ধরনের চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটে চলেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই অধিকাংশই রাতের বেলা বিভিন্ন বাসা-বাড়ি এবং দোকানে সংঘটিত হচ্ছে। লুট করা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের টাকা-পয়সা ও মানুষের বসতঘরের মূল্যবান মালামাল। গত দুই সপ্তাহে এ উপজেলায় দুই ডজনেরও বেশি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ফলে শঙ্কায় আছে লাখো মানুষ। এছাড়াও কিশোর গ্যাং এর আধিপত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালায়। এর কয়েকদিন পর পুলিশ কাজে ফিরলেও তাদের মধ্যে এখনো ভীতি কাজ করছে। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে এখানে কঠোর না হওয়ায় দিন দিন এখানে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ফলে এখানকার সাধারণ মানুষ আতংকিত।
সচেতন মহলে প্রশ্ন ওঠেছে-আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা নানা অপরাধে জড়িত ছিল তারা ছদ্মভেসে এখন এ কাজ করছে, নাকি নতুন কোন গ্রুপ এ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। এদিকে, প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই বাইপাসের শুরুতে (আনসার ভিডিপি ক্যাম্প) শ্রীমাই ব্রীজ এবং বাইপাসের বিভিন্ন পয়েন্টে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা মানুষকে দিনদিন আতংকিত করে তুলেছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পটিয়া উপজেলায় প্রায় রাতেই গরু চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এখনো তা চলমান রয়েছে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বদল হয়েছে শুধু হাত।
পটিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি এটিএম তোহা বলেন, পটিয়ায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, কিশোর গ্যাং অপরাধমূলক কর্মকান্ড রুখে দিতে প্রশাসনকে আরো তৎপর হতে হবে।
স্থানীয় সমাজ সেবক আশিকুল মোস্তফা তাইফু জানান, প্রায় রাতেই বাইপাস থেকে শুরু করে শ্রীমাই ব্রীজ এলাকায় চুরি, ছিনতাইয়ের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। ওই এলাকাটি অন্ধকার হওয়ার কারণে ছিনতাইকারীরা নিরাপদ পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে। পুলিশ প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানু্ষ চরম নিরাপত্তহীনতায় পড়বে।
এই পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম জানান, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি রুখতে পটিয়া থানা পুলিশ এখন খুবই তৎপর । যারা এহেন কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে তাদের ধরতে আমরা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। কোন অপরাধীকে আমরা ছাড় দেব না।
আপনার মতামত লিখুন :