ঢাকা: ক্ষমতায় থাকাকালীন হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) টাইমে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ড. ইউনূস বলেন, "তাদের (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতোই স্বাধীন হতে হবে। তবে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করাটাই প্রথম শর্ত। তাদের বিরুদ্ধে আমরা রাজনৈতিক ভিত্তিতে লড়াই করব।"
টাইমের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এসব অর্থ ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এদিকে বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন, "কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এটি ভালো লক্ষণ নয়, বরং এটি একটি স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ।" তিনি দ্রুত নির্বাচনের সময়সীমা এবং রূপরেখা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
ড. ইউনূস নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বলেন, "প্রথমে আমাদের রেললাইন ঠিক করতে হবে, যাতে ট্রেন সঠিক দিকে যেতে পারে।" ছয়টি মূল খাতে সংস্কারের কাজ চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে:
নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনর্গঠন,
পুলিশ প্রশাসন সংস্কার,
বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ,
দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি,
সরকারি প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং
জাতীয় সংবিধানের হালনাগাদ।
ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান:
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে বিবৃতি দিয়ে তিনি বর্তমান সরকারের ওপর সমালোচনা করছেন।
এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, "ভারতে বসে শেখ হাসিনা আমাদের সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে সহিংসতার দায়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে দেশে ফেরানোর জন্য আমরা ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি। তবে এটি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।"
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজের বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, "ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী; আমরা ব্যবসা করছি। আমরা কোনো সংকট থেকে উত্তরণের জন্য অর্থ চাইছি না। আমরা একটি ব্যবসায়িক অংশীদার চাই।"
ড. ইউনূস বলেন, দেশের "বাংলাদেশ ২.০" নামক পুনর্গঠনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। তার মতে, "সঠিক সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ফিরিয়ে আনলেই স্বৈরাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব।"
আপনার মতামত লিখুন :