বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ডিবি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন সনাতনী জাগরণ মঞ্চের নেতারা।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে সনাতনী জাগরণ মঞ্চের নেতারা মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সনাতনী জাগরণ মঞ্চের নেতারা ডিবি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তারা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানান। তারা সেখান থেকে শাহবাগে অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এর আগে, সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে হেফাজতে নেয় ডিবি পুলিশ।
পরে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ এই মঞ্চেরও মুখপাত্র। ওই সমাবেশের পরপরই চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত)।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে। সম্প্রতি এই জোট আট দফা দাবিতে রংপুরে সমাবেশ করেছে।
অন্যদিকে, সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে বহিষ্কার করেছে ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) বাংলাদেশ।
এদিকে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আজ সোমবার (২৫ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং অনতিবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী ও পেশা নির্বিশেষে সকল মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের সম্মিলিত রক্তের স্রোতধারায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।স্বাধীনতা সংগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণ ও ত্যাগ অনস্বীকার্য। সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলেন। জাতির পিতার হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশের কক্ষচ্যুতি ঘটলেও তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ এবং শান্তির আবাস হিসেবে রূপ লাভ করে।
কিন্তু সম্প্রীতির সেই বাংলাদেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী ফ্যাসিস্ট ইউনূস গং বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জনপদে পরিণত করেছে। অগণতান্ত্রিক এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সকলের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক মতের পাশাপাশি ধর্মীয় বিশ্বাস ও মত প্রকাশ এবং আচার-অনুষ্ঠানের উপর এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কোনো সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন আজ বাংলাদেশে নিরাপদ নয়। সর্বত্র সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে।
এই সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সনাতনী ধর্মাবলম্বীসহ বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, নির্বিচারে তাদেরকে হত্যা করা হয়। যা গণহত্যার শামিল। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা, বিশেষ করে সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা, এটার প্রতিবাদ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি বিভিন্ন দফা সম্বলিত দাবি জানায়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়।
একদিকে সরকারের মদদপুষ্ট উগ্রবাদীরা তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা উৎপাদন ও কটাক্ষ করতে থাকে। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তাদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়। এরই অংশ হিসেবে আজকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো সভ্য রাষ্ট্রে বিমানবন্দর থেকে কাউকে এভাবে গ্রেপ্তারের ঘটনা নজিরবিহীন। তাঁকে এভাবে গ্রেপ্তার করায় আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ সঙ্গে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অনতিবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। একই সাথে আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করার আহ্বান জানাই।
আপনার মতামত লিখুন :