রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এস্টেট ও ভূমির উপপরিচালক মো. সোহাগ। প্রতিষ্ঠানের কারো প্রয়োজন না হলেও তার প্রয়োজন, তাই তিনি পকেটে পিস্তল রাখেন সব সময়। এ কারণে রাজউক ভবনে তাকে সবাই ‘পিস্তল সোহাগ’ নামে চেনে। পিস্তলের কারণে কেউ পারতপক্ষে তার কাছে ঘেঁষতে চান না। অস্ত্রের ভয়ে সবাই তটস্থ। খোদ রাজউকও তাকে সহজে ঘাঁটায় না। এমনকি অসংখ্য অভিযোগ ও মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তিনি বরাবরই থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মো. সোহাগ নানা জাল-জালিয়াতি ও মামলাবাজিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। উত্তরা ৬ নম্বর সড়কের ১১ নম্বর প্লটের মালিক নাহিদা রহমানের সঙ্গে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেই সম্পর্কের সুবাদে তিনি সিমপ্লেক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণের চুক্তিপত্র করেন মহিলার সঙ্গে। শেষমেশ মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে বাগিয়ে নেন ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাট। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে ভবনটির পুনঃ নকশা করে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে বাগিয়ে নেন ১০ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, বাগিয়ে নেওয়া ফ্ল্যাটটি নির্মাণ করতে ডেভেলপারের চুক্তির বাইরে রাজউক অনুমোদিত ২২০০ বর্গফুট হলেও সাইট প্রকৌশলীকে ভয় দেখিয়ে বাড়িয়ে নেন ২৬০০ বর্গফুট।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, মো. সোহাগ মামলাবাজ। কথায় কথায় মামলা ঠুকে দেন। বাড়ির জমি নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে মালিক নাহিদা রহমান ও এলাকাবাসীর চেষ্টা ব্যর্থ হলে মো. সোহাগ সিমপ্লেক্স ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে আপন ভাতিজা শাহিদ মিয়াকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করান।
মামলা করিয়েই ক্ষান্ত হননি মো. সোহাগ। ডেভেলপার কোম্পানিটির কাজকর্মেও নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেন। তার এই অন্যায় আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে ডেভেলপার কোম্পানি ঊর্ধ্বতন মহলে একাধিক অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ যায় দুদকেও। অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। মামলাটি চলমান। তা ছাড়া কুমিল্লার দাউদকান্দি থানায় মো. সোহাগের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে ৪০ লাখ টাকার ‘এনআই অ্যাক্টে’ চেকের মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ছাড়া রাজউকের প্লট, নকশা পাস ও অকুপেন্সি সার্টিফিকেট পাইয়ে দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও অনবরত আসছে এই উপপরিচালকের বিরুদ্ধে।
এত অভিযোগ এবং মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। বলতে গেলে তিনি এখনো অধরা।
এ বিষয়ে মো. সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সুবিধাজনক সময়ে কথা বলবো। এরপর আবার ফোন করা হলে তার স্ত্রী জানান, তিনি ডাক্তারের চেম্বারে আছেন।
পরে রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সোহাগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আমিও শুনেছি। আপনারা লিখলে কমিটি করে খতিয়ে দেখব।
আপনার মতামত লিখুন :