নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকারের শুল্ক ছাড় ও আমদানির উদ্যোগের পুরোপুরি সুফল এখনও পাচ্ছেন না ভোক্তারা। চাল, চিনি, খোলা ভোজ্যতেল, ডিম ও পেঁয়াজের মতো কিছু পণ্যের দর কমেছে। তবে আলু, বোতলজাত সয়াবিন তেল, খেজুরসহ কয়েকটি পণ্য আগের মতো বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া সবজির সরবরাহ বাড়লেও দামে প্রভাব রয়েছে কম। আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) মহাখালী কাঁচাবাজার, নাখালপাড়া সমিতির বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক কমিয়ে দায় সারলে হবে না। এর সুফল ক্রেতা পাচ্ছে কিনা, সেটি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা, বাজার তদারকি চলমান রাখা এবং টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির আওতা বাড়াতে হবে।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দর ২ শতাংশের মতো কমলেও মাঝারি ও সরু চালের দর এখনও বেশি যথাক্রমে– ৩ ও ৬ শতাংশ। খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দর প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। আর বোতলজাত তেলের দর বেশি ১ শতাংশের মতো। তবে এ সময় চিনির দর প্রায় ৫ শতাংশ ও পেঁয়াজের দর ১০ থেকে ১২ শতাংশ কমেছে।
চালের বাজারে স্বস্তি
এবার চালের দাম বেশ ভুগিয়েছে। প্রায় তিন মাস পর এখন মিলেছে কিছুটা স্বস্তির খবর। কেজিতে কমেছে ৩ থেকে ৪ টাকা। প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ৫০ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এ ধরনের চালের কেজি ছিল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে কমেছে সর্বোচ্চ ৪ টাকা। বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় বিআর-২৮ ও পায়জাম জাতীয় চাল। এ ধরনের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৯ থেকে ৬২ টাকা। এ মানের চালের দর গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। সেই হিসাবে কেজিতে কমেছে সর্বোচ্চ ৩ টাকা। এ ছাড়া ৩ টাকার মতো কমে মিনিকেট বা চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।
দাম কমার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা মনে করেন, শুল্ক ছাড় ও আমদানির অনুমতির উদ্যোগ কিছুটা হলেও বড় ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমিয়েছে। যদিও বাজারে আমদানি করা চাল দেখা যায়নি। তাছাড়া বাজারে নতুন চাল আসা শুরু হয়েছে। এসব কারণে দাম কমছে।
কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের মনোয়ার হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ ধরে নতুন চাল আসছে। এ জন্য দর কমছে।
চিনির কেজিতে কমেছে ১০ টাকা
চিনির বাজারেও শুল্ক ছাড়ের ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। প্রতি কেজি প্যাকেট চিনি ১২৪ থেকে ১২৫ এবং খোলা চিনি ১২০ টাকার আশপাশের দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে দুই ধরনের চিনির দর ছিল যথাক্রমে কমবেশি ১৩০ ও ১৩৫ টাকা। সেই হিসাবে কেজিতে কমেছে ১০ টাকার মতো।
বোতলজাত তেলের সরবরাহে ঘাটতি
ভোজ্যতেলে শুল্ক কমানোর সুফল পুরোপুরি পাচ্ছেন না ভোক্তা; বরং বোতলজাত তেলের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা গেছে। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতল সয়াবিন তেল দেখা যায়নি বেশির ভাগ দোকানে। পাঁচ লিটারের বোতল থাকলেও বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দরে, অর্থাৎ ৮১৮ টাকায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে কেনা যেত ৭৯০ থেকে ৮১০ টাকায়। তবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহ স্বাভাবিক। পাম অয়েলের দর লিটারে ১০ টাকার মতো কমেছে। প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকার আশপাশের দরে। খোলা সয়াবিনের লিটার কিনতে খরচ হবে ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকা।
মহাখালী কাঁচাবাজারের মাসুমা স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. আল-আমীন বলেন, শুল্ক কমানোর কারণে কিছু জিনিসের দর কমেছে। তবে বোতলজাত তেলের সংকট আছে, দামও কমেনি।
পেঁয়াজ অপরিবর্তিত, কমেছে আদার
অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজের বাজার। গত সপ্তাহের মতো দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ১১৮ থেকে ১২০, দেশি হাইব্রিডের কেজি ১১০ থেকে ১১৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৯৮ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের মতোই রসুনের কেজি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদার দর কমতির দিকে। দেশি আদার কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ এবং চীনা আদার কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৮-১০ দিনে আদার কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে।
অস্বস্তি কাটেনি আলুর বাজারে
ছাড়ের পর আমদানিও হচ্ছে। তবু আলুর বাজারে ইতিবাচক প্রভাব নেই। বরং বাড়ছে দর। প্রতি কেজি নতুন আলু মানভেদে ৯০ থেকে ১১০ টাকা এবং পুরোনো আলুর কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে বিক্রি হওয়া নতুন আলু ভারত থেকে আমদানি করা। স্থানীয় আলু ক্ষেত থেকে ওঠার আগ পর্যন্ত দর কমার সুযোগ সীমিত।
সবজির সরবরাহ বাড়লেও প্রভাব কম
শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। সে তুলনায় দর কমেনি। প্রতি কেজি গোল বেগুন ৭০ থেকে ১০০, লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৭০, মানভেদে শিম ৫০ থেকে ৮০, পটোল ৫০ থেকে ৬০, ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৭০, উচ্ছে (ছোট জাত) ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি আকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, লাউডের পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মানভেদে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৪০ টাকা টাকা।
ডিম-মুরগির বাজার অপরিবর্তিত
অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম ও মুরগির দাম। আগের মতোই ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের ডিমের ডজন বড় বাজারে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও মহল্লার দোকানিরা রাখছেন ১৫০ টাকা। এছাড়া গরুর মাংসের কেজি ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারেও বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, শুল্ক ছাড় দেওয়ার কারণে সরকারের রাজস্ব আয় কমবে। তবে এর সুফল ক্রেতা পাচ্ছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে সরকারকে। অতীতে দেখা গেছে, শুল্কছাড়ের সুযোগ আমদানিকারকদের পেটে গেছে। সাধারণ ক্রেতা বঞ্চিত থেকেছেন। এ জন্য বাজার তদারকি ও পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর প্রতি জোর দেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :