ঢাকা শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪

জাতীয় নাগরিক পরিষদের ‘সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক বৈঠক

মোহাম্মদ তারেক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম

জাতীয় নাগরিক পরিষদের ‘সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক বৈঠক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জাতীয় নাগরিক পরিষদের ‘সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রোববার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে এই গোলটেবিল বৈঠকে সংগঠনের পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার এফ. রহমান।

জানা গেছে, প্রস্তাবনায় একটি ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা, জাতীয় ঐক্য এবং সামাজিক সংহতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জনকল্যাণমূলক সংস্কারের লক্ষ্য সামনে রেখে, এতে জবাবদিহিতাপূর্ণ সংসদ ও প্রশাসন, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা, এবং একটি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার সুষ্পষ্ট বণ্টন, ভারসাম্য, দায়িত্ব ও ভূমিকা নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, প্রস্তাবনায় সংবিধানে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে নাগরিকদের বিচারবহির্ভূত হয়রানি ও গুম থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টিও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রস্তাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোয় বিচারকদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি পৃথক বিচারবিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন বাজেট গঠনের সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বর্তমান সংবিধানের মুখবন্ধ ও রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিতে গণমানুষের বিশ্বাস ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন অনুপস্থিত বলে উল্লেখ করে প্রস্তাবে- সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং ইসলামকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই মূল্যবোধ ও চেতনা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের মূল প্রেরণা ছিল।

ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া ও সাম্প্রতিক সামাজিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে, প্রস্তাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার পাশাপাশি সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে নিয়ে কটূক্তির বিরুদ্ধে আইনি নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সংবিধানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে তাদের পরিচয়ের জন্য “ট্রান্সজেন্ডার” বা অন্য কোনো বিদেশি পরিভাষা নয়, বরং তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

প্রবাসী শ্রমিকদের বৈশ্বিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান সকল ধারাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং পরিবেশ সুরক্ষাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও এই সংস্কারের অংশ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, সাবেক সচিব এস. এম. জহরুল ইসলাম, মুফতি হারুন ইযহার, বিশিষ্ট কবি অধ্যাপক আব্দুল হাই শিকদার, লেখক ও কবি রেজাউল করিম রনি, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসাইন, অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, আসিফ মাহতাব উৎস, আসিফ আদনানসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। বক্তারা বর্তমান সংবিধানে বিদ্যমান বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরে সেগুলোর সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।

আরবি/এফআই

Link copied!