ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

মেহেদী হাসান খাজা
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) লাগা আগুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাগণ। ফায়ার সার্ভিসের ৬ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও দেশের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণকেন্দ্রে এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ সবার অজানা। এ ঘটনায় হাই পাওয়ারের তদন্ত কমিটি ঘটন করার কথাও বলা হয়। আগুন লাগার কারণ উদঘাট করতে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এদিন সকালে নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের উর্ধতম কর্মকর্তা ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা আগুন লাগা ভবনটি পরিদর্শ করে বিভিন্ন মন্তব্য করেন।

তবে আগুনের ঘটনা নাশকতা হিসেবে দেখছে সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। তারা বলছেন, আগুন পরিকল্পিত ভাবে দেওয়া হয়েছে। এরপরও সব কিছু মাথায় রেখে তদন্ত করা হবে। এবং তদন্তে এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের হয়ে আসবে।

জানতে চাইলে সরকারের ‍বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা রুপালী বাংলাদেশকে জানান, আগুনের ঘটনা নাশকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর সেটা হয়তো বের হবে-অথবা অন্য কিছু বের হতে পারে।

এদিকে সচিবালয়ে আগুন লাগা পরিকল্পিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন নৌবাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার (পিও) আমিনুল ইসলাম বরেচেন।  তিনি বলেন, সচিবালয়ে লাগা আগুন পরিকল্পিত হতে পারে। কারণ আগুনটা লেগেছে ছয় তলা, নয় তলার পাশাপাশি মাঝেও৷ এভাবে বিভিন্ন স্থানে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন কখনো লাগে না। এটা পরিকল্পনা মাফিক হতে পারে বলে।

অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, আগুনের ঘটনা তদন্তে আমরা ৯ থেকে ১১ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিচ্ছি। কেবিনেট সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে অলরেডি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাই পাওয়ারের একটি তদন্ত কমিটি করার জন্য বলে দেয়া হয়েছে।

এ অগ্নিকাণ্ডে পোড়া ভবনের আট-নয় তলার গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্র পুড়ে গেছে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।  তিনি বলেন, ভবনের বেশিরভাগ তলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে বলেও জানান তিনি

বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সচিবালয়ের সব গেট বন্ধ থাকায় নিজ কর্মস্থলে সঠিক সময়ে যোগ দিতে পারেনি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে তাদের প্রবেশের জন্য একটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।  এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিল না। এ কারণে সচিবালয়ের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়।  রাত ১টা ৫৪ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে।  প্রাথমিকভাবে আটটি ইউনিট কাজ করলেও পরে ইউনিটের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৯টি করা হয়। এরপর ৬ ঘণ্টার চেষ্টায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুরোপুরি নির্বাপন করতে ১১ ঘন্টার মতো সময় লাগে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সচিবালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতে প্রথমেই পড়ে ৭ নম্বর ভবন। আগুন লেগার ছয় ঘণ্টা পর আজ সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। এদিনে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৭ নম্বর ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে জানালার ভাঙা গ্লাস। আগুনে ভবনের ছয় থেকে আটতলা পুড়েছে। ভবনের চারদিকে ফায়ার সার্ভিসের ছিটানো পানি। কয়েকটি কবুতর মরে পড়ে আছে। ভবনের ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।