বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতি বাবুল কাজী মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। আজ রোববার (রোববার) বিকেল সাড়ে ৫টায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তিনি মারা যান।
এর আগে গতকাল শনিবার বার্ন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. মারুফুল ইসলাম বলেন, দগ্ধ বাবুল কাজীর শরীরের ৭৪ শতাংশ দগ্ধ হয়ে শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতোপূর্বে বাবুল কাজীর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছিলো।
এর আগে গত শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর বনানীর ২৩ নম্বর রোডে ১০৯ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার নিজ বাসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। শরীরের ৭৪ শতাংশ দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বনানীর ‘ডেল অ্যামর’ নামে পাচঁতলা বাড়ির চতুর্থ তলায় স্ত্রী নাদিরা ফারজানা রুনা ও দুই ছেলে-এক মেয়ে নিয়ে থাকতেন বাবুল কাজী। তিনি একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ছিলেন।
স্বাধীনতার পরপর কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে দেশে আনার সময় পরিবারের সঙ্গে আসেন বাবুল কাজী। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
টয়লেটের বর্জ্য থেকে বিস্ফোরণ?
বাসায় টয়লেটে লাইটারের আগুন জ্বালাতেই বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দগ্ধ হন বাবুল কাজী। ঘটনার পর থেকে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বাসায় টয়লেটে কেন বিস্ফোরণ হলো? এটি তিতাস গ্যাস নাকি টয়লেটের জমাট বর্জ্য থেকে গ্যাস বিস্ফোরণ, নাকি অন্যকিছু? ঘটনার বর্ণনা করে বাড়ির কেয়ারটেকার মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ফজরের নামাজ পড়ার জন্য অজু করছিলাম। ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। প্রথমে ধারণা করেছি, পাশের নির্মাণাধীন বাড়িতে কিছ ুএকটা হয়েছে। পরে শুনি, আমাদের বাড়ির ভেতর থেকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার। এরমধ্যে বাবুল সাহেবের বড় ছেলে ওপর থেকে নিচে নেমে এসে বলছেন, আবার বাবার শরীরে আগুন লেগেছে। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স আনতে হবে।
বাড়ির ম্যানেজার লাতিকুল বলেন, বিস্ফোরণের কারণে ওই টয়লেটের জানালা ও কুলিং ফ্যান ভেঙে ছিটকে পড়ে যায়। পুলিশ আসার পর টয়লেট থেকে সিগারেটের ছাই, একটি ছোট গ্যাস লাইটার ও টয়লেটের পোড়া পয়দা পাওয়া গেছে। এই বাড়ির প্রতিটা ফ্লোরে দুটি করে ফ্লাট। গ্যাসের লাইন গেছে ভবনের মাঝখান দিয়ে। আর যে টয়লেটে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটি বাড়ির একপাশে। রান্নাঘর থেকে টয়লেটের দূরত্ব প্রায় ৩০ মিটার। তিতাস গ্যাসের লাইন বা তিতাস গ্যাস জমার কোনও সুযোগ নেই।
বাবুল কাজীর বড় বোন খিলখিল কাজী বলেন, তার ভাইয়ের ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে। মাঝেমধ্যে তিনি বাসায় টয়লেটে গিয়ে সিগারেট খেতেন। শনিবার ভোরে বাথরুমে গ্যাস লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরাতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ হয়। তখন তিনি নিজেই বাথরুমের দরজা খুলে বাইরে বের হন। স্ত্রী-সন্তানরা মিলে তাকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, বাথরুমে মিথেন গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারোয়ার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাবুল কাজী যে বাড়িতে থাকেন, ওই বাড়িটি অনেক সিকিউরিটিপূর্ণ। সেখানে বহিরাগত কোনও মানুষের যাতায়াতের সুযোগ নেই। আমরা তদন্ত করার জন্য বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডের কাছে নাম লিপিবদ্ধ করে তারপর ওপরে উঠেছি। যে টয়লেটে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখানে তিতাস গ্যাসের কোনও সংযোগও নেই, রান্নাঘর থেকে টয়লেটের দুরত্ব অনেক। তবে টয়লেটের ভেতর থেকে সিগারেটের ছাই ও লাইটারের টুকরো দৃশ্যমান ছিলো।এছাড়া অন্য কোনও আলামত পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, টয়লেটের বর্জ্য থেকে জমাট মিথেন গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণ হতে পারে। তবুও বিষয়টি আরও তদন্ত করা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালে জন্ম নেওয়া কাজী নজরুল ইসলাম ২৫ বছর বয়সে কলকাতায় প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে চার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়, যাদের মধ্যে প্রথম সন্তান কৃষ্ণ মোহাম্মদ মারা যায় খুব ছোট বয়সে। দ্বিতীয় সন্তান অরিন্দম খালেদ বুলবুলের মৃত্যু হয় মাত্র চার বছর বয়সে। অপর দুই সন্তানের মধ্যে কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ কেউই দীর্ঘায়ু পাননি। আবৃত্তিকার কাজী সব্যসাচী ও উমা কাজীর ছেলে তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট বাবুল কাজী। তার বয়স ৫৯ বছর। বাবুল কাজীর বড় দুই বোন খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। জাতীয় কবির আরেক ছেলে কাজী অনিরুদ্ধের পরিবারের বসবাস কলকাতায়
আপনার মতামত লিখুন :