ঢাকা সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

বিশ্বের দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের সন্ধান

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৫, ১০:২৮ এএম

বিশ্বের দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের সন্ধান

মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিলে জলজ পাখি শুমারি-২০২৫ শেষ হয়েছে। এ শুমারিতে প্রথমবারের মতো বাইক্কা বিলে দেখা মিলেছে পৃথিবীর দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের। যাকে অনেকে ‘রকেট বার্ড’ও বলেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের মাছের অভয়াশ্রম বাইক্কা বিলে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের আয়োজনে এই পাখি শুমারি শেষ হয় গত শনিবার বিকেলে। পরে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য ও বিশিষ্ট পাখি বিশেষজ্ঞ ড. পল থমসন বলেন, এ বছর বাইক্কা বিলে শীতকালীন জলচর পাখি গণনা করে তারা ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০টি পাখির দেখা পেয়েছেন। এ সংখ্যা বিগত দুই বছরের চেয়ে বেশি। ২০২৪ সালে ৩৩ প্রজাতির ৪ হাজার ৬১৫ জলচর পাখি দেখা গিয়েছিল এবং ২০২৩ সালে দেখা মিলেছিল ৪০ প্রজাতির ৬ হাজার ১৪১ জলচর পাখির।

পাখি বিশেষজ্ঞ থমসন আরও বলেন, সংখ্যা পরিবর্তিত হয়, কোনো কোনো বছর ডিসেম্বর বা ফেব্রুয়ারিতে বেশি দেখা যায়। তবে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা নির্ভর করে জলস্তর, আগের মৌসুমের পরিস্থিতি এবং পরিযায়ন পথের ওপর। এর মধ্যে এ বছর বাইক্কা বিলে দেখা মিলেছে পৃথিবীর দ্রুতগতির পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকন।

এ ব্যাপারে বাইক্কা বিলের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সিএনআরএস’র সাইট অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, পাখি গণনাকারীরা তাদের জানিয়েছেন একটি মাত্র পেরিগ্রিন ফ্যালকনের দেখা মিলেছে। পাখিটি উড়ে এসে একটি ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।

পেরিগ্রিন ফ্যালকন একটি বিরল প্রজাতির পাখি। পাখিটি ঘণ্টায় ৩৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে উড়তে পারে। এমন দ্রুতগতির কারণে একে রকেট বার্ডও বলা হয়। তবে এই পাখি মাছের সঙ্গে অন্য পাখি ধরেও খেয়ে থাকে। বিশেষ করে হাঁস জাতীয় পাখি তাদের প্রিয়। আর বাইক্কা বিলে হাঁস জাতীয় প্রচুর পাখি রয়েছে।

পাখি গণনায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের অপর সদস্য সামিউল মহসিন জানান, এই বছর পাখি গণনায় উল্লেখযোগ্য ৭৫০ মেটে মাথা টিটি (গ্রে-হেডেড ল্যাপউইং) এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক কাস্তেচরা ৬৩৯ এবং ১০০ কালা মাথা কাস্তেচরা (ব্ল্যাক-হেডেড আইবিস) দেখা গেছে। 

তবে এবার বাইক্কা বিলের পাখির সংখ্যা অতীতের গড় গণনার সংখ্যার চেয়ে কম দাবি করে তিনি বলেন, ২০০৮-১০ এবং ২০১৪-১৯ সালে শীতকালে গড়ে ৯ হাজার জলচর পাখি দেখা মিলত।

সামিউল মহসিন আরও জানান, বাইনোকুলার, টেলিস্কোপের সাহায্যে ও তাদের পাখি গণনার সূত্র এবং থিয়োরির মাধ্যমে বাইক্কা বিলের এ পাখি গণনা করেন তারা। তিনি বলেন, বাইক্কা বিলের এরিয়া ১৭০ হেক্টর। এখানে মাছের অভয়াশ্রম করা হয়েছে। 

তাই সারা বছরই এখানে পানি ধরে রাখা হয়। হাইল হাওরের মধ্যে আরও ৬০-৭০টা বিল থাকলেও এ বিলেই বেশি পাখির দেখা মেলে। যে কারণে পাখি গণনার জন্য এই বিলটিকে বাছাই করে নেওয়া হয়েছে।

বাইক্কা বিল পরিচালনায় নিয়োজিত বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিন্নত আলী জানান, পুরো হাইল হাওরেই পাখি থাকে। তবে বাইক্কা বিলে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এখানে পাখির সংখ্যা বেশি থাকে।

তিনি বলেন, বাইক্কা বিলের জন্য পাঁচজন পাহারাদার আছে, পালাক্রমে এটি দেখাশোনা করেন তারা। তবে বিশাল এলাকা তাদের পক্ষে সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়। বাইক্কা বিল পরিচালনা ও বিলে অবাধ লোক সমাগম বন্ধ করতে এখানে পুনঃপ্রবেশ ফি চালু করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, টিকেটিং সিস্টেম চালু করলে এখান থেকে সরকারও রাজস্ব পাবে এবং এর একটা অংশ দিয়ে লোকবল বাড়ানো যাবে। পাশাপাশি উন্নয়ন কাজও করা যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রিত হলে পাখিদের জন্যও নিরাপদ স্থান হিসেবে থাকবে এটি।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!