ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সহায়ক বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করছে কারা কর্তৃপক্ষ। এসবের মধ্যে রয়েছে- খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত, লাইব্রেরি তৈরি, পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, শিক্ষা, শরীরচর্চা, বিনোদনসহ রয়েছে নানা কর্মসূচি।
এসব বিষয়ে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সোরায়া আক্তার। তিনি বলেন, কারাগারের বন্দী ও কর্মচারীদের শারীরিক ও মানসিক উন্নয়ন এবং বন্দীরা যাতে কৌশলগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সেই ধারাবাহিকতায় আমরা বিভিন্ন আয়োজন করছি।
তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বন্দীদের ন্যায্য প্রাপ্যতা এবং খাবারের গুণগত মান শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, ক্যান্টিনে ন্যায্য মূল্যও নিশ্চিত করা হয়েছে।
বন্দীদের হয়রানি বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, বন্দীদের সঙ্গে যারা দেখা করতে আসেন তাদের হয়রানি বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন, ব্যাগসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র বিনামূল্যে সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
কারাগারের অভ্যন্তরে অবৈধ দ্রব্য (বিশেষ করে মাদক ও মোবাইল ফোন) প্রবেশ বন্ধে লাগেজ স্ক্যানার ও বডি স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য তিনটি স্থানে তল্লাশি দল বসানো হয়েছে।
বিনোদনের বিষয়ে জেল সুপার বলেন, কারাগারে বন্দীদের বিনোদন ও শরীরচর্চার জন্য ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা এবং জিমনেসিয়ামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া এক হাজার সমৃদ্ধ বই নিয়ে একটি লাইব্রেরি তৈরি করা হয়েছে, যাতে বন্দীরা অবসর সময়ে বই পড়তে পারেন।
বন্দীদের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বন্দীদের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেয়াদি প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছে। এর ফলে বন্দীরা এখন জামদানি, বেনারসি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, জুতো এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করতে পারছেন। এসব পণ্য বিক্রির পঞ্চাশ শতাংশ লাভ বন্দীরা পান, যা তারা পরিবারের কাছে পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
শিক্ষার বিষয়ে সোরায়া আক্তার বলেন, কারাগারে বন্দীদের মেধা ও মননচর্চার জন্য স্পোকেন ইংলিশসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় এক হাজার ৮০০ বন্দী এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন এবং তাদের সনদ দেওয়া হয়েছে। গবাদি পশুপালন, মৎস্য চাষ এবং চারু-কারুকলার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৯২০ জন গবাদি পশুপালনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ও এক হাজার ৬৯০ জন চারু-কারুকলার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া, এক হাজার ১৩৫ জন বন্দীকে দক্ষ ইলেকট্রিক্যাল প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
জেল সুপার বলেন, বন্দীদের জন্য সংগীত প্রশিক্ষণও চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার বন্দী সনদ অর্জন করেছেন। এছাড়া, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য মুসলিম বন্দীদের মসজিদ-মক্তব ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রার্থনার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে কারাগারে ১০টি মক্তববে আট হাজার ৪৫২ জন বন্দী কোরআন শিক্ষা নিয়েছেন। হিফজ শাখায় বন্দীরা দুই হাজার ২০১ বার কোরআন খতম করেছেন এবং ৬৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও কোরআন শিক্ষা নিয়েছেন।
এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বন্দীরা কারাগার থেকে বের হয়ে বৈধভাবে আয় করছেন এবং সুন্দর জীবনযাপন করছেন। ফলে একদিকে যেমন তারা অপরাধ থেকে দূরে থাকছেন অন্যদিকে সমাজে বেকারত্বের হারও কমছে জানান কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সোরায়া আক্তার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদকাসক্ত বন্দীদের পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশেষ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৫৫০ জন মাদকাসক্ত বন্দীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাদের মাদকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে এবং ধর্মীয় ও নৈতিক দিকনির্দেশনা দিতে মোটিভেশনাল বক্তব্যের আয়োজন করা হয়। কর্মচারীদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সম্প্রতি কারাগারে পিঠা উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। গত এক জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দীদের ভাপাপিঠা পরিবেশন করা হয়।
কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, আমরা বন্দীদের নিয়ে কাজ করছি। বন্দীরা কারাগার থেকে বের হয়ে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে এবং আয় করার সুযোগ পায়, তার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কারাগারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন, তাদের জন্য সহায়ক বিভিন্ন কার্যক্রম করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :