‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী অঞ্চলসমূহে বিটিএস স্থাপনসংক্রান্ত নির্দেশিকা-২০২১’ রহিত করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আগের নির্দেশনাটি সংশোধন, সংযোজন এবং অন্যান্য পরিমার্জন শেষে ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী অঞ্চলসমূহে বিটিএস স্থাপনসংক্রান্ত নির্দেশিকা-২০২৫’ জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
নতুন নির্দেশিকায় দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলসমূহে বিটিএস তথা মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের নানা শর্ত শিথিল করা হয়েছে। ফলে সহজ হলো এসব অঞ্চলে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন প্রক্রিয়া। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে খাতসংশ্লিষ্ট এবং নিরাপত্তা ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
নতুন এই নির্দেশিকাটি সম্প্রতি নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে বিটিআরসি। নির্দেশিকাটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোবাইল টাওয়ার স্থাপনে ক্ষেত্রবিশেষে এখন আর একাধিক নিরাপত্তা সংস্থার অনাপত্তিপত্রের প্রয়োজন নেই।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলা ছাড়া আন্তর্জাতিক সীমারেখা থেকে দেশের অভ্যন্তরে (শূন্য থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে) মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের ক্ষেত্রে বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের দাখিল করা আবেদন ও অন্যান্য কাগজপত্রের সঠিকতা যাচাই করবে।
এরপর কমিশন অনাপত্তি প্রদানের বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরকে (এনএসআই) অবহিত করবে।
আগের নির্দেশিকায় উল্লিখিত নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে ৪৫ দিনের মধ্যে অনাপত্তিপত্রের জন্য অনুরোধ জানানোর বাধ্যবাধকতা ছিল। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সীমারেখা থেকে তিন থেকে আট কিলোমিটারের মধ্যে টাওয়ার স্থাপনের জন্য শুধু ডিজিএফআইকে অবহিত করা হবে। যদি পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা সংস্থার দিক থেকে নির্দেশনা আসে, তাহলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগে এ জন্য ডিজিএফআইয়ের কাছে অনাপত্তিপত্রের জন্য অনুরোধ পাঠাতে হতো।
অন্যদিকে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার আন্তর্জাতিক সীমারেখা থেকে দেশের অভ্যন্তরে (শূন্য থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে) টাওয়ার বসাতে হলে ৪৫ দিনের মধ্যে আপত্তি বা অনাপত্তি প্রদানের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে (এএফডি) অনুরোধ জানানো হবে।
উল্লেখিত সময়ের মধ্যে এএফডি থেকে মতামত পাওয়া না গেলে আপত্তি নেই হিসেবে গণ্য হবে এবং সে অনুযায়ী টাওয়ার স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা সংস্থা থেকে কোনো দিকনির্দেশনা এলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আগের নির্দেশিকায় সব নিরাপত্তা সংস্থার কাছে অনাপত্তিপত্রের জন্য অনুরোধ করতে হতো।
জানা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারত ২০২২ সালে সীমান্তে টাওয়ার স্থাপনসংক্রান্ত সব ধরনের শর্ত তুলে নেয়। সীমান্তের সীমারেখা থেকে শূন্য কিলোমিটারের মধ্যেই তারা টাওয়ার বসানো শুরু করে। এর পর থেকেই অপারেটরদের দাবি ছিল, বাংলাদেশের সীমান্তেও নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে শর্তগুলো সহজ করা।
বিটিআরসির নতুন এই নির্দেশিকাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন অংশীজনরা। মোবাইল টেলিকম অপারেটরদের সংগঠন এমটব এর মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার এ বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। আগে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নেটওয়ার্ক স্থাপনে বেশ জটিলতা ছিল এবং তাতে সময়ক্ষেপণ হতো।
কিন্তু এখন নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক কম সময়ের মধ্যেই আমাদের অপারেটররা সীমান্ত এলাকাগুলোতে নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে পারবে। ফলে ওইসব এলাকায় মোবাইল সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।
পাশাপাশি বিটিআরসির এই উদ্যোগে আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নতুন কোনো উদ্বেগ সৃষ্টি করবে না বলেও মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম শামছুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, হিল ট্র্যাকসে (পার্বত্য এলাকা) মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকলে সেখানকার অপরাধীদের সুবিধা হবে, এমন আশঙ্কায় দীর্ঘদিন সেখানে নেটওয়ার্ক দেওয়া হয়নি। বাস্তবতা যে ভিন্ন সেটি পরে দেখা গেছে।
অপরাধীরা তাদের কাজে মোবাইল নেটওয়ার্ক এখন ব্যবহার করেও না। ওয়াকিটকি বা এপস বা আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। খুবই নিচের সারির অপরাধীরা এই মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে হয়তো। সেক্ষেত্রে উলটো তাদের ট্রেস (শনাক্ত) করা যাবে।
পাশাপাশি চার হাজার কিলোমিটারের বেশি আমাদের সীমান্ত এলাকা। সীমান্ত থেকে ৮ কিলোমিটারের হিসেব ধরলে প্রায় ৩২ হাজার কিলোমিটার এলাকায় এখন মোবাইল নেটওয়ার্ক সহজ হবে। বিশাল এই জনগোষ্ঠী মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে যার সুফল দেশের অর্থনীতিতে পড়বে।
আপনার মতামত লিখুন :