ঢাকা সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

৪৩তম বিসিএসের ২২৭ জনের প্রজ্ঞাপন এখনো হয়নি, রোববারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন দাবি

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৫, ১১:১০ পিএম

৪৩তম বিসিএসের ২২৭ জনের প্রজ্ঞাপন এখনো হয়নি, রোববারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন দাবি

ছবি: সংগৃহীত

৪৩তম বিসিএস এ দ্বিতীয় গেজেট থেকে বাদ পড়া ২২৭ জনের প্রজ্ঞাপন এখনো হয়নি। এ নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সমবেত কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এ সময় তারা তাদের হতাশা ও মানসিক পীড়নের কথাও তুলে ধরেন।

বাদ পড়া ২২৭ জনের আবারও পুনতদন্ত হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তালিকা প্রস্তুত করে সিনিয়র সচিবের স্বাক্ষর শেষে ফাইল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হয় গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি)।উপদেষ্টার ব্যস্ততার কারণে সুইজারল্যান্ড সফরের আগে স্বাক্ষর করে যেতে পারেন নি।

গত ১৫ জানুয়ারি ১৮৯৬ জন যোগদান করেছে, সবার সাথেই ২২৭ জনের যোগদানের কথা। এই ২২৭ জন ও তাদের পরিবার মানসিক পীড়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তারা গত সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন আশা করেছিল।

প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় দেশে ফিরে স্বাক্ষর করে দিবেন এবং আগামী রবিবার ২৬ জানুয়ারি ২০২৫  একটা প্রজ্ঞাপন হয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যোগদান করতে পারবে বলে ৪৩তম বিসিএস এ বাদ পড়া ২২৭ জন এবং তাদের পরিবার আশা ব্যক্ত করেছেন।

তাদেরই একজন নিজেদের হতাশা ও  আশা ব্যক্ত করে আরমান হোসেন বলেন, আমাদের ফাইল গত ১৯ জানুয়ারি রবিবার থেকে প্রধান উপদেষ্টা দপ্তরে আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সিনিয়র সচিব ড মোখলেসুর রহমান স্যার স্বাক্ষর করে আমাদের প্রজ্ঞাপনের সামারি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা স্যার এর ব্যস্ততার কারণে স্বাক্ষর করে যেতে পারেন নি, উনি দেশে ফিরবেন ২৪ জানুয়ারি, আমরা আশা করতেছি রবিবার ২৬ জানুয়ারি আমরা প্রজ্ঞাপন পাব। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড মো. ইউনুস স্যার এবং তরুণ উপদেষ্টা মাহফুজ আলম স্যার এর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে রবিবার ফাইল স্বাক্ষর হয়ে আমরা প্রজ্ঞাপন পেতে পারি।

৪৩তম বিসিএস কৃষি ক্যাডার হামিদুর রসুল বলেন, ৪৩তম বিসিএসের গেজেট বঞ্চিত হয়ে শুধু একটা কথাই মনে হয় এই দিন দেখার আগে মরে যাওয়া ভালো ছিল।৫ বছরের কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। হায়রে নিয়তির খেলা!

৪৩তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার মাসুমা আক্তার মিনি বলেন, ৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়ে যাওয়া আমাদের এই ২২৭ জনের সুখের দুয়ারে এমন দুঃখের অনল আজ আমাদের বাস্তুহারা করেছে, স্যার। আপনার দেয়া আশ্বাসে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি, কিন্তু আজও ঘরে ফিরতে পারিনি৷ দয়া করে আপনার দেয়া আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়ন করে আমাদের চাকরিটি আমাদের ফিরিয়ে দিবেন, স্যার। আমরা ঘরে ফিরতে চাই।

আরও একজন শিক্ষা ক্যাডার সমরজিত বলেন, ৩০ ডিসেম্বর ২য় গ্যাজেটে আমার নামটি দেখতে না পাওয়ায় আমার জীবন অন্ধকারে ঢেকে গেছে, আমার মা ক্যান্সার পেসেন্ট, তার  কান্না আমি থামাতে পারছি না, দ্রুত গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে এই অনিশ্চয়তা দূর করা হোক।

এদিকে ট্যাক্সের একজন ভাই বলেছেন, আমার কাছের মানুষজন ট্যাক্সের প্রায় ৯০ জন জয়েন করেছেন, পদায়ন পেয়েছেন, ফেসবুকে দেখছি, বিষয়টা সুখকর। পরক্ষণেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে আমারও তো সেখানে থাকার কথা, অথচ আমি নেই। আমার কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ক্যাম্পাসে/এলাকায় কোথাও নেই, কারো সাথে কখনো কোন অন্যায় করেছি এমন কেউ বলতে পারবেনা আশা করি। আমি দ্রুত প্রজ্ঞাপন চাই, আর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই নিয়োগ চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস স্যারের কাছে সকলের পক্ষ থেকে আবেদন করছি দেশে আসার পর পরই যাতে এই বিষয়টা দেখেন।  প্রধান উপদেষ্টা দপ্তরে থাকা প্রজ্ঞাপনের ফাইল যাতে স্বাক্ষর হয়ে প্রজ্ঞাপন পাই আমরা ৪৩ তম বিসিএস ২২৭ জন এর এখনো প্রজ্ঞাপন হয় নি।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) এর মাঝে প্রজ্ঞাপন এর মধ্যে ৭টি প্রত্যাশা তুলে ধরে তারা-

১. ১৫ অক্টোবর, ২০২৪- ৪৩ তম বিসিএস এর প্রথম গেজেট প্রকাশ (গেজেট থেকে বাদ পড়েন ৫৯ জন) এই গেজেট মোতাবেক জয়নিং তারিখ নির্ধারণ হয় ১৭ নভেম্বর,২০২৪।

২. ২৮ অক্টোবর, ২০২৪- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নোটিশ এর মাধ্যমে জইনিং ডেট পিছিয়ে ১ জনুয়ারি, ২০২৫ নির্ধারণ করে। 

৩. ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪- সবাই যখন জইন এর অপেক্ষায় তখন ঠিক ২ দিন আগে আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে যেখানে ২২৭ জন এর গেজেট বাতিল করা হয়। 

৪.১ জানুয়ারি, ২০২৫- দ্বিতীয় গেজেটে বাদ পড়া ২২৭ জন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক পুনর্মূল্যায়ন এর আবেদন করেন। 

৫. ৯ জানুয়ারি, ২০২৫- NSI, DGFI প্রতিনিধি এর সাথে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক এবং মিটিং শেষে সিনিওর সচিব স্যার মিডিয়ার কাছে বক্তব্য পেশ করেন যে, ১. ফৌজদারি অপরাধ ২. রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ এবং ৩. একাডেমিক জীবনে বহিষ্কারাদেশ এই তিন অপরাধ না থাকলে ২-৩ কর্মদিবসের মধ্যে  নিরপরাধ যারা তাদের সবার গেজেট হবে এবং মেজরিটি সংখ্যক হবে বলেও আশ্বাস দেন।

৬. পুনরায় যাচাই-বাছাই শেষে সংস্থা কতৃক মন্ত্রণালয়ে আবার ২২৭ জন এর তথ্য প্রেরণ করা হয় এবং মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশের উদ্দেশ্যে নতুন করে ১টি তালিকা প্রস্তুত করে। 

৭. প্রাপ্ত তথ্য মতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতকৃত তালিকা প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয় (১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী) ধারণা করা হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার বিদেশ সফরের কারণে অদ্যাবধি ফাইলটি অনুমোদন করা হয় নি। যেহেতু ২৫ জানুয়ারি দেশে ফিরছেন, আমরা আশা করছি আগামী রবিবার আমাদের ফাইলটি প্রধান উপদেষ্টা দপ্তরের অনুমোদনের মাধ্যমে আমাদের গেজেট প্রকাশ করা হবে।

উল্লেখ্য, এই ২২৭ জন এর মাঝে ২০৮ জন প্রথম গেজেট এ ছিলেন এবং আগের গেজেট এ বাতিল করা ৫৯ জন এর মাঝে ৪১ জন নতুন গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করে।

আরবি/জেডআর

Link copied!