কালো, লালচে, বেগুনি ও বাদামি রঙের চাল! শুনতে অবাক লাগলেও রঙিন এই চালে রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। বাহারি রঙের পাশাপাশি স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে এ চাল দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সাধারণ সাদা চালের তুলনায় রঙিন চালে বেশি পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। বিশেষ করে, এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
প্রায় তিন বছর ধরে চালানো গবেষণার বরাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছোলায়মান আলী ফকির ও তাঁর গবেষক দল এসব তথ্য জানান। রঙিন চালের চাষ পদ্ধতি, ফলন ও পুষ্টিগুণের ওপর গবেষণা করে তারা সাফল্য পেয়েছেন। লালচে ও কালো রঙের চালে থাকা পুষ্টিগুলোর মাত্রা বের করতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি ওই গবেষক দলের।
শনিবার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধ্যাপক ছোলায়মান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক নেছার উদ্দিন, আলমগীর হোসেন-১ ও আলমগীর হোসেন-২। গবেষক দলে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর হোসেন-২, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাগরিকা খাতুন।
ছোলায়মান আলী ফকির জানান, রঙিন চাল মূলত পাহাড়ি অঞ্চল এবং উদ্ভাবনী কৃষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এটি এখন সাধারণ মানুষের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চালের রং লাল, কালো, বাদামি কিংবা বেগুনি হতে পারে। আমরা মূলত লাল ও কালো রঙের চালটি নিয়ে গবেষণা করে এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণের মাত্রা বের করেছি।
গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চালের চেয়ে কালো চালে ২-৩ গুণ খনিজ পদার্থ বিশেষত, আয়রন ও জিংক বিদ্যমান। এগুলোর বাইরের আবরণে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন এবং অন্যান্য ফাইটো-কেমিক্যাল উপাদান এসব চালকে করেছে অনন্য। অ্যান্থোসায়ানিনের উপস্থিতির কারণে চালের রং লাল হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।
চাষাবাদ ও ফলন সম্পর্কে প্রধান গবেষক জানান, এটি মূলত আমন মৌসুমে চাষ হয়, তবে বোরো মৌসুমেও ফলন সম্ভব। এ ধানের ফলন কিছুটা কম হলেও বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
এই ধানের একটি চ্যালেঞ্জ হলো কম রাসায়নিক সার সহনশীলতা এবং পাখি বা রোগবালাইয়ের প্রতি সংবেদনশীল। তাই উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :