আর মাত্র এক দিন পর শনিবার দ্বার খুলবে এবারের অমর একুশের বইমেলার। বইমেলা দেশের সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য এক মাইলফলক। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’- এই প্রতিপাদ্যে নিয়ে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ঋদ্ধ অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি।
ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় বিশেষ আকর্ষণ থাকবে ‘জুলাই চত্বর’। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হবে ২৪-এর জুলাই-আগস্টের চিত্র। বই মেলার রং হিসেবে থাকছে লাল, কালো ও সাদা। লাল রং- বিপ্লবের প্রতীক, কালো- শোকের প্রতীক এবং সাদা রং- আশার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
পহেলা ফেব্রুয়ারি বইমেলার শুভ উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, স্টলগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
জানা যায়, এবারের বইমেলা হবে পলিথিন মুক্ত। পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো ব্যাগে বই বিক্রি করা হবে না। এছাড়া ব্যবহারযোগ্য বোতলজাত পণ্যও মেলায় নিষিদ্ধ থাকছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।
সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে কথা হয় জিনিয়াস পাবলিকেশনের প্রকাশক মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। প্যাভিলিয়নের কাজ তদারকি করছিলেন তিনি। তিনি রূপালী বংলাদেশকে বলেন, আমরা প্রকাশকরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি বইমেলা শুরুর জন্য।
এ প্রাণের মেলা মূলত লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও দর্শনার্থীর এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। এবারের বইমেলা একটু ব্যতিক্রম। আশা করছি খুব ভালো যাবে বইমেলা। প্রতিবারের ন্যায় আমার প্রকাশনীতে এবারও শিশুদের জন্য থাকবে বিশেষ আকর্ষণ এবং দেশি লেখকদের পাশাপাশি তো বিদেশি লেখকদের অনুবাদ থাকেই।
তিনি বলেন, প্যাভিলিয়ন ও স্টল নির্মাণের কাজসহ মেলা-মাঠের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে। ইলেকট্রিক ও লাইটিংসহ কিছু স্টলে রঙের টুকিটাকি কাজ চলছে।
চমন পাবলিকেশনের প্রকাশক এনাম রেজা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও স্টল বরাদ্দ পেয়েছি। অবকাঠামো তৈরির কাজ শেষ বলা যায়। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এবারের বই মেলা আরো প্রাণবন্ত হবে বলে আশা করি।
তিনি বলেন, ভালো বইয়ের প্রতি পাঠকের চাহিদা এখনো আগের মতোই আছে। লেখক যদি ভালো লেখা প্রকাশ করেন সেক্ষেত্রে পাঠক সেগুলো সাদরে গ্রহণ করেন। তবে, ইদানিং কিছু মানুষ নিম্নমানের লেখা বিভিন্ন প্রকশনী থেকে প্রকাশ করেন। যার দায়ভার কোনোভাবে আমরাও এড়াতে পারি না।
কথা বলেন সাহিত্য দেশ পাবলিকেশনের প্রকাশক সফিক সাইফুল। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এবারের মেলায় স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ ধীরগতিতে চললেও আশা করছি সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে।
টুকটাক কিছু কাজ সেটির জন্য কোনো প্রভাব মেলাতে পড়বে না। একই সাথে, আশা করছি খুব ভালো একটি বইমেলা হবে এবার। সকল ধরনের পাঠকের সমাগমে মুখরিত হবে এবারের অমর একুশে বইমেলা।
স্টলের রং-মিস্ত্রি মো. হাফিজুর মিয়া বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রঙের কাজ করছি। স্টলে আমরা প্রায় ১০০ জন কাজ করেছি। সবাই মিলে চেষ্টা করেছি কাজ তেমন বাকি নেই।
গত ২১ জানুয়ারি পুরোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও ২২ জানুয়ারি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের লটারি ডিজিটাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হয়। মেলার সার্বিক প্রস্তুতি ও যাবতীয় বিষয় নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এবারের বইমেলায় ইউনিট বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। গত বছর ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ছিল ৫১৫টি প্রতিষ্ঠান। এবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯৩টিতে। এরই মধ্যে ৪, ৩, ২, ১ ইউনিটসহ শিশুদের জন্যে লটারির মাধ্যমে ইউনিট-১, ২ ও ৩ শিশু স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, একুশে বইমেলা সুন্দরভাবে করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এবারের বইমেলা সুন্দর, নিরাপদ এবং প্রাণবন্ত হবে। আশা করি, বইমেলা হবে কবি, লেখক, প্রকাশক এবং পাঠকদের এক মিলনমেলা।
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, বইমেলার নীতিমালায় অনুযায়ী- বাংলা একাডেমি নির্ধারিত কমিশনে একাডেমির বই বিক্রি হবে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি হবে। ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণ-অভ্যুত্থান ও যেকোনো জাতিসত্তাবিরোধী, অশ্লীল, সাম্প্রদায়িক এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে এমন বই-পত্রিকা বিক্রয়, প্রচার ও প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবারের বইমেলা সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। একই সাথে, শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা ও শনিবার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। বিরতির পর পুনরায় রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা উন্মুক্ত থাকবে।
মেলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য থাকছে ‘নতুন বই উন্মোচন মঞ্চ’ এবং ‘লেখক বলছি মঞ্চ’। যেখানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং বই সম্পর্কে লেখক-পাঠক-দর্শকের মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা থাকছে।
আপনার মতামত লিখুন :