ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

রাজধানীর ধনী এলাকা পল্টন, দরিদ্র বেশি কামরাঙ্গীরচরে

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম

রাজধানীর ধনী এলাকা পল্টন, দরিদ্র বেশি কামরাঙ্গীরচরে

গুলশান কিংবা বনানী নয়! দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম পল্টনে। অর্থাৎ রাজধানী ঢাকার পল্টন হলো দেশের সবচেয়ে ‘ধনী’ এলাকা। এখানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম। মাত্র এক শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

এ ছাড়া ঢাকায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কামরাঙ্গীরচরে, ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিএস প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র-২০২২’ শীর্ষক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছে। 

মানচিত্রে দেখা গেছে, দেশের গ্রাম এলাকায় দারিদ্র্য কমেছে, কিন্তু শহর এলাকার দারিদ্র্য বেড়েছে। ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে গ্রাম এলাকার দারিদ্র্য ছিল ২০ দশমিক ৫; দারিদ্র্য মানচিত্রে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। খানা জরিপে শহর এলাকায় দারিদ্র্য ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ; দারিদ্র্য মানচিত্রে তা কমে হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। 

দারিদ্র্য মানচিত্রের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাদারীপুর জেলার দারিদ্র্যের হার ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ডাসার উপজেলার দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া মাদারীপুরের উপজেলাগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দারিদ্র্য ৫০ শতাংশ। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা জেলার সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ১৯.৬ শতাংশ। আর সামগ্রিকভাবে দেশের দারিদ্র্যের হার ১৯.২ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেশজুড়ে বিত্তশালী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তর অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র উঠে এসেছে। দেশে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে সামনে আসা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলোকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ২০.৩ শতাংশ; শহরাঞ্চলে এই হার ১৬.৫ শতাংশ। ২০১৭ সালের ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে নির্ধারিত আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা হলো দৈনিক আয় ২.১৫ ডলার। অর্থাৎ, দৈনিক ২.১৫ ডলারের কম আয় করা মানুষ দরিদ্র বলে গণ্য হবেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার পল্টনে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম। এই এলাকার মাত্র এক শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ১৯.১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। 

জরিপে দেখা গেছে, ভাষানটেকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, মিরপুরে ১২ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। এমনকি রাজধানীর ধনী এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানীতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। এ ছাড়া দারুস সালামে ১১, যাত্রাবাড়ীতে ৯ দশমিক ৪, আদাবরে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। 

অন্যদিকে ঢাকার নিউমার্কেটে এক দশমিক ৭ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। এ ছাড়া রমনায় ৪ দশমিক ৪, মতিঝিলে ৩ দশমিক ৬, কোতোয়ালিতে ২ দশমিক ৯, গুলশানে ৩ দশমিক ২, গেন্ডারিয়ায় ২ দশমিক ৪, ধানমন্ডিতে এক দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
বিবিএস জানিয়েছে, এবার রংপুরকে পেছনে ফেলে বরিশাল সর্বোচ্চ দারিদ্র্যপীড়িত বিভাগ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। 

২০১৬ সালে বরিশাল দারিদ্র্যের দিক থেকে ছিল পঞ্চম স্থানে। ওই বছর রংপুরের দারিদ্র্যের হার ছিল সর্বোচ্চ ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। ছয় বছর পর ২০২২ সালের হিসাবে, রংপুরের দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশ।

বরিশালের দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামে এই হার গ্রামে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং শহরে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিশালের পরই বেশি দরিদ্র মানুষ ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। 

ঢাকায় দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। এই সময়ে কমেছে রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে দারিদ্র্যের হার। এদিকে সবচেয়ে বেশি ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ দরিদ্র মানুষের বাস মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায়। সিলেটে দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. মাহবুব হোসেন। বিশেষ অতিথি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উপপ্রধান সিমোন লসন পার্চমেন্ট। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান। 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, বিবিএস ও এসআইডির কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!