ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় আসামি হয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ফলে তারা অফিসে না আসায় দুই সংস্থারই প্রাত্যহিক কাজকর্মে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে তাদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার ১৬ জানুয়ারি দুদকে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি রাজউকের ভূমি বরাদ্দ বিধিমালার আলোকে প্লট বরাদ্দের বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের আদেশ পালন করেছেন মাত্র।
এ বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশকে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের মামলার আসামির তালিকায় এমন লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বা রিসিভ করেছেন কিংবা ডেসপাচ করেছেন, তারা তো প্লট জালিয়াতি অথবা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু তাদের সমানভাবে অপরাধী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্বাচলে শেখ পরিবারের ৬০ প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে ২০২৪-এর ২৬ ডিসেম্বর অনুসন্ধানে নামে দুদক। ১৬ জানুয়ারি দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ মেলার তথ্য দেন। মূলত এরপরই ক্রমান্বয়ে ছয়টি মামলা দায়ের করে দুদক।
এসব মামলায় শেক হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও তাদের ছেলেমেয়ে ছাড়াও রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
সূত্র বলছে, আসামির তালিকায় রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান, সদস্যসহ কেরানি, কম্পিউটার অপারেটরসহ অনেকেরই নাম গড়পড়তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রাজউক চেয়ারম্যান জানান, এই মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী অফিসে আসছেন না। ফলে অফিসের প্রাত্যহিক কাজকর্মে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ভয় থেকে বাঁচাতে আমরা বলেছি, তারা যদি সত্যিই দায়ী হয়ে থাকেন, আইন ভঙ্গ করে থাকেন, সেটি আরও বিশ্লেষণ করে যেন তাদের বিষয়টি বিবচেনা করা হয়।
কেউ যদি প্রকৃত দোষী হয়, যদি কেউ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্লট দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি অবশ্যই দোষীÑ তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হোক। কিন্তু কেরানি, কম্পিউটার অপারেটর যারা সিস্টেমে পড়েছেন অর্থাৎ, পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, তাদের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার কথা বলেছি।
রাজউক চেয়রম্যান তার চিঠিতে রাজউকের প্লট বরাদ্দ বিধিমালায় কোন কোন ক্ষেত্রে সরকার প্লট বরাদ্দ দিতে পারবে, সে-কথাও তুলে ধরেন। এ ছাড়া আইনের অধীনে চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যরা নির্ধারিত বা সময়ে সময়ে অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতা পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে রাজউকের প্লট আইন ও বিধি মোতাবেক সরকারের আদেশে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দুদকের মামলায় রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের ওপর আইন ও বিধি মোতাবেক সেসব প্লট বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সরকারের আদেশ মোতাবেক কাজ না করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বর্ণীত আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো।
গতকাল রাজউক চেয়ারম্যান এই প্রতিবেদককে জানান, তার চিঠি পাঠানোর পর দুধক থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে অহেতুক কাউকে গ্রেপ্তার কিংবা হয়রানি করা হবে না। তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয় ও শঙ্কা এড়িয়ে কাজে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
আপনার মতামত লিখুন :