দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাচুক্তি করা হলেও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ কয়েকটি বিমানবন্দরের ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়কাজ বাতিল করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এসব কাজের ঠিকাচুক্তি বাতিল এবং নতুনভাবে সরকারনির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।
কাজগুলোর মধ্যে কুর্মিটোলার ইর্শাল কলোনিতে ১৪ তলা ভবন নির্মাণ, সিএটিসি কমপ্লেক্সে নতুন মসজিদ নির্মাণ, বেবিচক প্রধান কার্যালয়ের পূর্ব পাশে ছয়তলা অফিস ভবন নির্মাণ, বেবিচকের প্রশাসনিক এলাকায় সেমসুর অফিস কমপ্লেক্স, ওয়ার্কশপ, ওয়্যার হাউস নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ এবং কুর্মিটোলায় বেবিচক কলেজের পাশে একাডেমিক ভবন নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের ছয়তলা আবাসিক ভবন, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ১৪ তলা ভবনের ১০ তলা আবাসিক ভবন ও ছয়তলা কোয়ার্টার নির্মাণ, কক্সবাজার বিমানবন্দরে ডি-টাইপ কোয়ার্টার নির্মাণ, বাগেরহাট খান জাহান আলী বিমানবন্দরে অফিস ভবন কাম রেস্টহাউস, কার পার্কিং, ক্যানেক্টিং এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তার জন্য ভূমি উন্নয়ন ও ড্রেনেজ সিস্টেমের নির্মাণকাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, গেল আর্থিক বছরে বেবিচকের নিজস্ব তহবিল থেকে এসব কাজের নির্মাণ খরচ বহন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী বেবিচকের বর্ধিত জনবলের দাপ্তরিক, আবাসন, ধর্মীয় উপাসনা, শিক্ষালয়সহ অন্যান্য সুবিধা তৈরির প্রয়োজনে এসব কাজ জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের আবশ্যকতা থাকায় দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় এসব কাজ এখনো শুরু হয়নি। তাছাড়া এসব কাজের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য গত বছর বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেয়। সেটিও বাস্তবায়িত হয়নি। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া আবাসিক ভবন, অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।
তবে চলমান নির্মাণকাজের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ শেষ হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে এমন নির্দেশনা রয়েছে।
বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কার্যাদেশপ্রাপ্ত কাজগুলোর মধ্যে শুধু পূর্ত কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, ই/এম কাজ অন্তর্ভুক্ত নেই। ফলে কাজ বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হতে পারে। এছাড়া যেহেতু ডিপিপি প্রণয়ন ও অনুমোদন না করে কাজগুলোর প্রশাসনিক অনুমোদন, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ শেষে কার্যাদেশ দান করা হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা শৃঙ্খলার পরিপন্থি এবং যেহেতু চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতাধীন ভবন নির্মাণসংক্রান্ত কাজের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিধিনিষেধ রয়েছে এবং ঠিকাচুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে বর্ণীত কাজগুলোর ইন্স্যুরেন্স পাওয়া যায়নি এবং দাপ্তরিক/আবাসিক/মসজিদ/কলেজ একাডেমিক ভবনসংশ্লিষ্ট কাজগুলোর ক্যাপাসিটি যথাযথ ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পাদনের মাধ্যমে পূর্বনির্ধারণ করা প্রয়োজন, সেহেতু এসব কাজের প্রশাসনিক অনুমোদন ঠিকাচুক্তি বাতিল করে নতুনভাবে সরকারনির্ধারিত যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজগুলো বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চলমান কিছু কাজের চুক্তিও বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে বেশ কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, পছন্দের ঠিকাদার কাজ না পাওয়ায় পুরো চুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে করে ঠিকাদারদের পাশাপাশি বেবিচকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার নতুনভাবে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু করতে অনেক সময় লেগে যাবে। সেই সঙ্গে বিপুল অর্থও খরচ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :