শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। বইমেলার কোনো বই নিয়ে দুইদিনে আলোচনা-সমালোচনা শোনা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে বইমেলার ডাস্টবিন নিয়ে।
বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ডাস্টবিন স্থাপন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ডাস্টবিনে আবর্জনা ফেলার ছবি পোস্ট করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এ সংক্রান্ত ৫টি ছবিও পোস্ট করেন। তবে পরে সে ছবি সরিয়ে নেন তিনি।
অনেকেই হাসিনার ছবিকে ডাস্টবিনের প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনাকে রুচির দুর্ভিক্ষ বলে সমালোচনা করেছেন। সঞ্চালক ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে লিখেছেন- বাংলা একাডেমী আয়োজিত ডাস্টবিন মেলায় এবার বই পাওয়া যাচ্ছে।
ডাস্টবিনের প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেও অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক এবং ত্রৈমাসিক জার্নাল সর্বজনকথা`র সম্পাদক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ফেসবুকে লিখেছেন- খুব বাজে, রুচিহীন এবং দায়িত্বহীন সংস্কৃতির পরিচয় দিয়ে শুরু হলো বাংলা একাডেমির বইমেলা। নিন্দা জানাই।
বিশিষ্ট কবি ও চিন্তক ব্রাত্য রাইসু লিখেছেন- ছবি দিয়া ডাস্টবিন বানানো বা কুশপুত্তলিকা দাহ এইগুলি গণতান্ত্রিক ওয়ে। কিন্তু সরকারের বা সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ না।
এ বিষয়ে তিনি আরেকটি পৃথক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- বইমেলায় স্বৈরাচারী হাসিনার ছবি সম্বলিত ডাস্টবিন বসানোটা রুচির প্রশ্ন না। ইউনূস সরকার ও তার প্রেস সচিব মব তৈরি করতেছে, সমস্যা এই জায়গায়। ঘৃণা উৎপাদন ও মবকে ঘৃণা করার উপাত্ত সরবরাহ করা সরকারের বা বাংলা একাডেমির কাজ না। সরকারের কাজ বিচার নিশ্চিত করা। বাংলা একাডেমির কাজ রাজনীতি নয়, বইমেলা করা।
বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে লিখেছেন, শেখ হাসিনা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছেন। এত বড় শারীরিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি তিনি ছাড়া আর কেউ করেননি। কিন্তু তারপরও আমি মনে করি ঢাকার অমর একুশে বইমেলায় শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে ডাস্টবিন বানানো উচিত হয়নি। এসব করে বইমেলা কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন।
নেত্র নিউজের এডিটরইন-চিফ তাসনিম খলিল লিখেছেন, শেখ হাসিনার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনে আমাদেরকে আরও নান্দনিক এবং রুচিশীল হতে হবে। হাসিনার ছবির পাশে মোমবাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে কোমল, রাবীন্দ্রিক সুরে গাইতে হবে: “হে মহামান্য, তুমি অত্যাচারী অনন্য ”
এদিকে সাংবাদিক শায়ান এস খান লিখেছেন, Some people are suggesting the Hasina Dustbins at Boi Mela, or the press secretary`s act of using them, are in bad taste. "Oh My Lord! What are we teaching our children?" they implore.
We are teaching our children what happens when we become too arrogant, what happens when we cheat, what happens when we shelter murderers, when we breed corruption, when we clamp down on anyone who opposes us, when we rewrite history to suit us, when we lie shamelessly in front of 170 million people, when we order to shoot at unarmed protesters, and when we steal elections. That is all we`re teaching our children.
যার বাংলা অনুবাদ অনেকটা এরকম- কিছু মানুষ বলছেন, বইমেলায় হাসিনার ছবি সংবলিত ডাস্টবিন রাখা বা প্রেস সেক্রেটারির তা ব্যবহার করা রুচিহীন কাজ।
"হায় ঈশ্বর! আমরা আমাদের সন্তানদের কী শেখাচ্ছি?"— তারা এসব বলে আহাজারি করছেন।
আমরা আমাদের সন্তানদের শেখাচ্ছি অহংকারের পরিণাম।
আমরা শেখাচ্ছি প্রতারণার ফল।
আমরা শেখাচ্ছি খুনিদের আশ্রয় দিলে কী হয়।
আমরা শেখাচ্ছি দুর্নীতি করলে কী হয়।
আমরা শেখাচ্ছি বিরোধীদের দমন করলে কী ঘটে।
আমরা শেখাচ্ছি ইতিহাস বিকৃতির পরিণাম।
আমরা শেখাচ্ছি মিথ্যার শাস্তি।
আমরা শেখাচ্ছি নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালানোর ফল।
আমরা শেখাচ্ছি নির্বাচন চুরি করলে কী হয়।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সেই ডাস্টবিনের একটি ছবি পোস্ট করেছে। তাতে তারা লিখেছে, আজ থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা-২০২৫। বইমেলায় এলে আপনার হাতের অপ্রয়োজনীয় ময়লা-আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলতে ভুলবেন না। মেলার অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সুন্দর রাখুন, আবর্জনামুক্ত থাকুন।
এদিকে বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বইমেলায় শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার ছবি ভাইরাল হয়েছে।
উল্লেখ্য, অনেকে মনে করছেন পুরো বইমেলার মাঠজুড়ে হয়তো শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত এমন বিন রাখা হয়েছে। তবে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এমন ময়লা ফেলার পাত্রটি কেবলমাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্টলের সামনে বসানো হয়েছে। যা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এটি একটি প্রতীকী ডাস্টবিন।
তবে বইমেলায় বই নিয়ে এখনো তেমন কোনো আলোচনা শোনা না গেলেও শুধু ডাস্টবিন নিয়েই সমালোচনায় আলোচনা হওয়ায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন-
বইমেলায় এসে মানুষ বই না খুঁজে সবাই এখন ডাস্টবিন খুঁজে!
সম্পাদনায় সরকার জারিফ
আপনার মতামত লিখুন :