শতকোটি টাকার কাজে কমিশন বাণিজ্য

মাইনুল হক ভূঁঁইয়া

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০২:৩৯ এএম

শতকোটি টাকার কাজে কমিশন বাণিজ্য

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল ও উত্তরা প্রকল্পের প্রায় শতকোটি টাকার উন্নয়নকাজের ঠিকাদার নিয়োগ এবং কার্যাদেশ প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাচলে ৯ গ্রুপ ও উত্তরা প্রকল্পে ৮ গ্রুপ। গেল বছরের নভেম্বরের দিকে এসব নয়ছয়ের ঘটনা ঘটে।

রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্বাচল প্রকল্পের নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। উত্তরা প্রকল্পের কাজে ব্যয় বরাদ্দ ছিল ২৫ কোটি টাকা।

তা ছাড়া উত্তরা সুইমিংপুল নির্মাণকাজে ১৭ কোটি ও মাদানি এভিনিউর রাস্তা নির্মাণে এক কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

পূর্বাচল ও উত্তরা প্রকল্পের মোট ১৭ গ্রুপের কাজে ব্যয় বরাদ্দ ছিল সব মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকা।

এই শতকোটি টাকা উন্নয়নকাজের ঠিকাদার নিয়োগ থেকে শুরু করে কার্যাদেশ প্রদান পর্যন্ত প্রক্রিয়াজুড়ে ছিল অসচ্ছতা ও দুর্নীতি। নেপথ্যে ছিল ৫ পার্সেন্ট কমিশন। সে হিসাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পকেটে ঢুকেছে পাঁচ কোটি টাকা।

শুধু এই টাকার লোভেই তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালী, পূর্বাচলের প্রকল্প পরিচালক নুরুল ইসলাম ও উত্তরার প্রকল্প পরিচালক মোজাফ্ফরউদ্দিন মিলেমিশে এই অপকর্ম ঘটিয়েছেন।

তবে তারা একটি ভালো কাজ করেছেন, কাউকে চটাননি। 

রাজনৈতিক তকমাধারী তিন দলেরই ঠিকাদারদের মাঝে এই বিপুল অংকের কাজ বণ্টন করে দিয়েছেন। 

তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৬, বিএনপির ২ এবং জাতীয় পার্টির একজন করে ঠিকাদার রয়েছেন।

আর এই অনৈতিক কাজের তদ্বিরকারক ছিলেন ঠিকাদার ও ছাত্রদল নেতা মো. দুলাল।

অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের আগে রাজউকের সব উন্নয়নকাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন শেখ হেলাল গ্রুপ।

এখন পুরো গ্রুপই রয়ে গেছে, বদলেছে শুধু নিয়ন্ত্রক। বিএনপির এক শীর্ষ নেতার নিয়ন্ত্রণে চলে এখনকার গোটা গ্রুপ।

তবে তিনি থাকেন আড়ালে-আবডালে। ফোনে ফোনে কাজ হয়, কখনো কখনো গোপন জায়গায় চলে বৈঠক। সেই বৈঠকেই স্থির হয় বণ্টন তালিকা। এরপর তদ্বিরকারকের ভূমিকায় নামেন একেক সময় একেক ছাত্রদল নেতা। তিনি আবার একাধারে ঠিকাদারও।

সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, এ কারণেই রাজউকের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ধুঁকছে। কখনো খুঁড়িয়ে, কখনো আবার নির্জীব হয়ে যায়।

পূর্বাচল ও উত্তরা প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অবস্থাও একই কারণে বেহাল দশা। সবচেয়ে বেশি কাহিল পূর্বাচল প্রকল্প। বারবার ঘোষণা হয়, কিন্তু প্রকল্পটির কাজ আর শেষ হয় না।

কবে নাগাদ শেষ হবে কর্তাব্যক্তিসহ কেউ বলতে পারেন না।

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ জমানার ১৫ বছর আমরা শুধু ঠকেছি রাজনৈতিক তকমা নেই বলে। 

ভেবেছিলাম আগস্ট বিপ্লবের পর বৈষম্য দূর হবে, আমরা ন্যায্য অধিকার ফিরে পাব।

কিন্তু রাজনৈতিক লেবাস না থাকায় এবারও আমরা বঞ্চনার শিকার। 

প্রধান প্রকৌশলী ও পিডিদের লোভ এবং একপেশে নীতির কারণে আমরা বারবার মার খাচ্ছি। এর অবসান দরকার।

এ বিষয়ে জানার জন্য তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমানে অবসরপূর্ব ছুটিতে) আব্দুল লতিফ হেলালীর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পূর্বাচলের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক, বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) মো. নুরুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। সব কাজই স্বচ্ছতার সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। সব ফার্মকেই পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই এবং মার্কিং শেষে কাজ দেওয়া হয়েছে।

যারা কাজ পায়নি, তারা তো অসত্য বলবেনই। তা ছাড়া নভেম্বরের কাজের বিষয়ে এখন বলে কি লাভ।

যারা কাজ পেয়েছেন তারা কাজও শেষ করে এনেছেন। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!