রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে বিক্ষোভ করছে ‘২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র জনতা’। বুধবার রাত আটটার দিকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বাড়িটিতে ঢুকে ভাঙচুর করতে থাকে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩২ নম্বর এলাকায় বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী মিছিল এবং স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে এবং ভাঙচুর আগুনের ঘটনা ঘটনাতে থাকে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লাইভে বক্তব্য দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশেকে ‘ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি’ মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন। পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’
জানা যায়, রাতে ছাত্রসমাজের উদ্দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরা ঘোষণা দিয়েছেন, ঠিক যে সময়ে শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়া শুরু করবেন, তখনই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভবনে ভাঙচুর চালানো হবে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রাত ৯ টায় ছাত্র সমাজের উদ্দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার কথা জানালেই এমন প্রতিবাদ আসে।
হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্টের কমেন্টে মাশুকুর রহমান মায়েদ নামের এক আইডি থেকে কমেন্ট করা হয়েছে, ‘আজ রাত ৯ টায় ৩২ এর ১২টা বাজাবে ৩৬ এর জনতা।’
মো. সাজিদ এক আইডি থেকে কমেন্ট করা হয়েছে, ‘ধানমন্ডি ৩২-এ তোমরা প্রস্তুত তো! আমরা ছাত্র-জনতা আসতেছি ইনশাল্লাহ। লংমার্চ টু ধানমন্ডি ৩২... মুজিববাদ মুর্দাবাদ...ধুলোয় মেশাও তাড়াতাড়ি, ৩২ এর দালানবাড়ি।’
তিলোত্তমা পানকৌড়ি নামের এক ফেসবুক আইডি থেকে লিখা হয়েছে, ‘এত ডর করে তোমার পুড়ে ছাই হওয়া একটা বাড়ি কে! ডরপোকদের দিয়ে রাজনীতি হয় না জানো তো?’
শেখ হাসিনার ভাষণ কোনো গণমাধ্যম প্রচার করতে পারবে না
এর আগে আজ বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ প্রসঙ্গ এ দেশে আর নেই। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কসাই। তাঁর কোনো ভাষণ যদি এখন কোনো গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, তাহলে সে গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করছে বলে ধরে নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে হাসনাত বলেন, ‘৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ চ্যাপ্টার ক্লোজড। তারা যদি প্রাসঙ্গিক থাকতই, তাহলে ৫ আগস্ট পালায়ে যাইতে হইত না।’ গণমাধ্যমের উদ্দেশে হাসনাত বলেন, ‘মিডিয়ায় এখনো দেখি ভাশুরের নাম মুখে নিতে কেমন যেন লাগে। এখনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী লেখা হয়। উনি কি সাবেক, নাকি ফ্যাসিবাদের “বুচার অব দিস মাদারল্যান্ড”? তিনি এই বাংলাদেশের বুচার (কসাই)। তিনি চেয়ার টিকিয়ে রাখতে দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন। কেন মিডিয়াতে ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনা লেখা হয় না? ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনা যদি না লেখেন বা না বলেন, আপনারা আওয়ামী কাঠামো বা মিডিয়া রয়েছে, সেটির সিলসিলা অব্যাহত রাখছেন।’
গেট ভেঙে ধানমন্ডি-৩২ নম্বর বাড়ির ভেতরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে গতকাল বুধবার রাত ৯টায় `লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২` কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স। ঘোষণা অনুযায়ী গেট ভেঙে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ৮টার দিকে প্রবেশ করেন তারা।
জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের মুখপাত্র ফানতাসির মাহমুদ বলেন, ‘আমরা সন্ধ্যার পর থেকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে আছি। প্রতি মিনিটে শত শত মানুষ আসছে। আমরা বুলডোজার দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দিতে চাই।’
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে বুধবার রাত ৯টায় `লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২` কর্মসূচি পালন হয়।
স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ধানমন্ডি ৩২, ভাঙচুর-আগুন
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল অধিবেশনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ‘বুলডোজার মিছিলের’। ঘোষণা অনুযায়ী রাত ৮টায় কর্মসূচি থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে সেখানে জড়ো হতে থাকে ছাত্র-জনতা। সেখানে জড়ো হয়ে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত ৮টার কিছু আগে ৩২ নম্বরের ওই বাড়িতে ঢুকে পড়ে ছাত্র-জনতা। চালানো হয় ভাঙচুর। প্রথমেই ৩২ নম্বরের বাড়িতে প্রবেশের মুখে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। অনেকেই দিচ্ছে মুহুমুর্হু স্লোগান। পুরো বিল্ডিংটির অবকাঠামোই ভেঙে ফেলা হচ্ছে। দ্বিতীয় তলার একাংশে দেওয়া হয়েছে আগুন। যদিও গত ৫ আগস্ট এক দফা ৩২ নম্বরের এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল।
বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা বলছেন, যারা ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল সেসব ফ্যাসিবাদীদের কোনো চিহ্ন বাংলাদেশের মাটিতে রাখতে চাই না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ সময় উত্তেজিত ছাত্র-জনতাকে, ‘খুনি আসলে লাইভে, জনতা যাবে ৩২ এ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
এর আগে, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ খবর পাওয়ার পরপরই বিকেলে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল উত্তেজিত জনতা।
আপনার মতামত লিখুন :