‘বহুমুখী সংকটের মধ্যেও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ’

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম

‘বহুমুখী সংকটের মধ্যেও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ’

ফাইল ছবি

বহুমুখী সংকটের মধ্যেও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

বর্তমান সরকারের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে গণমাধ্যমকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “স্থিতিশীলতা ও ঐক্য বজায় রাখা এবং চাপ মোকাবেলায় নিরন্তর প্রচেষ্টার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সর্বদা বিকশিত জাতীয় দৃশ্যপটের মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারি নাহিদ বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠে দেশের জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে এমন একটি ভবিষ্যত গঠনে অবিচল রয়েছি।’

উপদেষ্টা বলেন, গত ছয় মাসে সরকারের পথচলা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা, শতাধিক আন্দোলন পরিচালনা, অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হওয়াসহ বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে।

প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নাহিদ ইসলাম বিশ্বাস ব্যক্ত করেন যে, অব্যাহত সংলাপ, সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে গত বছরের ৮ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ছয় মাস বয়সী সরকার জাতি যে পরিবর্তন চেয়েছিল তা অর্জন করতে পারবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসাবেও দায়িত্ব পালনকারি নাহিদ ইসলাম বলেন, সামনের রাস্তাটি এত মসৃণ হবে না, তবে সঠিক সমর্থনসহ অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জন্য আরও স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপনের আশা করে ।

নাহিদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের ওপর দেশের মানুষ বিপুল প্রত্যাশা রাখায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক বিষয়গুলো সরকার পরিচালনায় জনসাধারণের উদ্বেগের প্রধান ক্ষেত্র।

সরকার ব্যাপক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, “আমরা যখন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন বিশৃঙ্খলা ছিল। আমলাতন্ত্র ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল এবং আমাদেরকে সেখান থেকে তাদের পুনর্গঠন করতে হয়েছিল। এটা সহজ কাজ ছিল না।”

নাহিদ বলেন, ‘আগের প্রশাসনের চর্চা, বিশেষ করে ব্যাপক চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করেছিল যা রাতারাতি দূর করা যাবে না।’

তিনি বলেন ‘যদিও অভ্যুত্থান সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার সাথে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিল, তবে অনেকেই জাতীয় কল্যাণের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থের পিছনে ছুটতে শুরু করেছিল।’

হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই বিভক্তির কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ঐক্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, একসময় যে ঐক্য ছিল তা ক্ষীণ হয়ে গেছে। এই সংহতির অভাব সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে ঐক্য সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে। আমরা মতবিরোধ নিরসনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং অতীতের বিভাজনমূলক অভ্যাসগুলিতে ফিরে আসা এড়াচ্ছি।”

উপদেষ্টা বলেন, অর্থবহ সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারের সাফল্যের মাধ্যমে ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষমতার প্রকৃত পরীক্ষা আসবে। তিনি বলেন “আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সংস্কারের ইস্যুতে আমরা কতটা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। আগামী মাসগুলি দেখাবে আমরা কতটা অগ্রগতি করতে পারি।”

নাহিদ জোর দিয়ে বলেন, যে কোনও অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দল এবং জনগণ উভয়ই পদ্ধতিগত সমস্যাগুলি দূর করতে একসাথে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এমন কিছু উপাদান আছে যারা এখনও চাঁদাবাজিতে জড়িত এবং কিছু ব্যক্তি যারা গণজাগরণে অংশ নিয়েছিল তারা এখন এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। সহযোগিতা ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা কঠিন হবে।

সংস্কার বনাম নির্বাচনের ইস্যুটিও একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে বিএনপি আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে বলে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, সরকার সংস্কার এবং নির্বাচনকে পারস্পরিক একচেটিয়া হিসাবে দেখে না বরং পরিপূরক উদ্দেশ্য হিসাবে দেখে।

তিনি বলেন “সংস্কার কমিশন নির্বাচনী ও শাসন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে কাজ করছে। নির্বাচনের আগে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে... অন্যথায় অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে” ।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম স্পষ্টভাবে বলেছেন, সরকার স্বাধীনভাবে তার নীতির সমালোচনা করার গণমাধ্যমের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেনি। নাহিদ বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের সমালোচনা করার জন্য গণমাধ্যমের ওপর কোনো চাপ দেয়া হয়নি।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সরকার যখন মুক্ত গণমাধ্যমের ধারণাকে সমর্থন করে, তখন এটি নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে রিপোর্ট করার সময় সতর্ক হতে বলেছে।

এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নাহিদ অবাধ ও মুক্ত গণমাধ্যম পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন “সরকার গঠনমূলক সমালোচনাকে উৎসাহিত করে এবং ইতোমধ্যে মিডিয়া প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পরিবর্তনগুলি বাস্তবায়ন করেছে। আমরা যৌক্তিক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই এবং আমরা আমাদের নীতিতে সামঞ্জস্য বজায় রাখব।”

আরবি/এসবি

Link copied!