দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে এবং কবে রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে, এই বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যেই, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘একটি জাতির গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠার জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত সম্ভব, এ বছরের শেষের দিকে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।’
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাপানের সরকারি টেলিভিশন এনএইচকেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। এর আগে বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে, তিনি চলতি বছরের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করেছিলেন। তবে, সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের সময়সীমা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর নির্বাচন কমিশন জানায়, তারা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের জন্য কমিশন পুরোপুরি প্রস্তুত। অন্তর্বর্তী সরকার যখন চাইবে, তখনই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।’
তবে, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার এখনও সম্পন্ন হয়নি। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, নির্বাচনী আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন যাচাইসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, এসব কাজ শেষ করতে অন্তত পাঁচ-ছয় মাস সময় লাগবে, যা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনাকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।
বিএনপি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গত ছয় মাসে পলাতক স্বৈরাচারী ও তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এর ফলে জনগণ বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে।’ এমন পরিস্থিতিতে তারা দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্র সংস্কারের পর নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক করা হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো আগে আওয়ামী লীগ সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, পরে নির্বাচন—এমন দাবিতে অটল রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা দায়ের হলেও এখনো কোনো মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের অনিশ্চয়তা এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার দীর্ঘায়িত হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব হবে কি না, নাকি রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হবে?
আপনার মতামত লিখুন :