বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান ও সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ হাওলাদার টিটু সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গাছ পাচার, ইটভাটা থেকে চাঁদাবাজি ও পোস্টিং বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা অবৈধ আয় করছেন। প্রধান বন সংরক্ষকের আস্থাভাজন দাবি করে তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বন ও পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাদের প্রধান সহযোগী রাসি উ দৌল্লাহ বান্দরবান বন বিভাগের শুয়ালক ফরেস্ট চেক স্টেশনের বর্তমান স্টেশন অফিসার।
সম্প্রতি এই ফরেস্ট চেক স্টেশনের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরকে উপকূলীয় বন বিভাগের মহেশখালী শাপলাপুর বিটে বদলি করার পর টংকাবতী রেঞ্জ কর্মকর্তা রাসি উ দৌল্লাহকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছেন বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান।
রাসি উ দৌল্লাহ উর্ধ্বতন-কর্মকর্তাদের আস্থাভাজন এবং ক্যাশিয়ার হওয়ায় লাগামহীনভাবে অবৈধ বনজদ্রব্য পাচারে জড়িয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া ওই এলাকার সব ইটভাটা থেকে চাঁদা তোলায় বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। নির্বিচারে পোড়ানো হচ্ছে এসব ইটভাটায় বনাঞ্চলের কাঠ।
স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, শুয়ালক ফরেস্ট চেক স্টেশন পেরিয়ে অবৈধ গাছ পাচারের মহোৎসব চলছে। রাত যত গভীর হয়, ততই সরব হয় চেক স্টেশনটি। রাতের আঁধারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ (রদ্দা ও গোলকাঠ) পাচার করছে কাঠ চোরাকারবারি চক্র।
অবৈধ গাছ পাচারে প্রতি গাড়ি থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর প্রধান বন সংরক্ষকের নাম ভাঙিয়ে কমিশন তোলেন বান্দরবান সদর রেঞ্জ ও বিশেষ টহল দলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ হাওলাদার টিটু। তিনি এই রেঞ্জসহ বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে সিএফএর নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তোলেন। আদৌ এই টাকা সিসিএফ পর্যন্ত পৌঁছে কি না তা সবার অজানা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুর রহমান ওই শুয়ালক ফরেস্ট চেক স্টেশন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন ১৮টি ইটভাটার। তিনি প্রতিটি ইটভাটা থেকে মাসে ৩ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন। চাঁদা না দিলে ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ ও মামলার হুমকি দেওয়া হয়। ফলে ইটভাটার মালিকেরা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানিয়েছেন, শুয়ালক স্টেশন কর্মকর্তা রাসি উ দৌল্লাহ সম্প্রতি অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে সদর রেঞ্জ কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ডিএফওকে প্রতি মাসে ঘুষ দিয়ে শুয়ালক ফরেস্ট চেক স্টেশনে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রধান বন সংরক্ষক ও ডিএফও’র সাথে গভীর সম্পর্কের কারণে দিনদিন বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করেও রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ হাওলাদার টিটুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় ওই সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু, শুয়ালক ফরেস্ট চেক স্টেশনের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকার মানুষের দাবি, অসাধু এই সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।
বন ও পরিবেশের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এলাকার জনগণকে শান্তিতে থাকার ও অবৈধ বনজদ্রব্য পাচার রোধসহ বৈধ পন্থায় সাধারণ মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রধান বন সংরক্ষক ও বন সংরক্ষক চট্টগ্রাম অঞ্চল চট্টগ্রামের প্রতি আবেদন জানান সচেতন মহল।