২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ৩৩ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে কর্মরত যুগ্ম সচিব ও সমপর্যায়ের পদে থাকা প্রশাসনের ৩৩ জন কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হওয়া ডিসিরা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে রির্টানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পৃথক ছয়টি প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর মধ্যে পাঁচটি প্রজ্ঞাপনে প্রতিটিতে ছয়জন করে এবং আরেকটিতে তিনজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করার কথা জানানো হয়েছে। অবশ্য কী কারণে এসব কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে, তা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়েছে, জনস্বার্থে এই আদেশ জারি করা হয়েছে।
তারা হলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক ড. মো. আতাউল গনি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন, যুগ্মসচিব এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের ও যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এস.এম. মোস্তফা কামাল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. মাজেদুর রহমান খান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক এস. এম. অজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব গোপাল চন্দ্র দাশ।
কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর বরিশালের আঞ্চলিক পরিচালক মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. ওয়াহিদুজ্জামান ও মাহমুদুল কবীর মুরাদ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ কে এম মামুনুর রশিদ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব এস, এম, আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন ও মো. মাহমুদুল আলম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল, পরিকল্পনা বিভাগের যুগ্মপ্রধান (সংযুক্ত) মোছা. সুলতানা পারভীন, যুগ্মসচিব মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদের নির্বাহী সচিব মো. শহিদুল ইসলাম, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মসচিব মো. আলী আকবর।
কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক মিজানুর রহমান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) মিজ আনার কলি মাহবুব এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।
২০১৮ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল। এবার নতুন করে ৩৩ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হলো। ওএসডি হওয়া এই ৩৩ জন কর্মকর্তা বর্তমানে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ওএসডি হওয়ার পর তারা এখন কোনো নির্দিষ্ট দায়িত্বে নেই এবং তাদের বেতন-ভাতা চলমান থাকলেও পদোন্নতির সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত ও তদারকি চলছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের ওএসডি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনে কোনো অনিয়ম বা অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনকারী অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিষয়েও তদন্তের পরিধি বাড়ানো হতে পারে।
বিরোধী দলগুলো এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও তারা দাবি করেছে, শুধু ওএসডি করাই যথেষ্ট নয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, সরকারপক্ষের বক্তব্য হলো, আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :