পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ও ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে পরিচিত শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানাসহ দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। অপরজন হলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট বিল্পবের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। তার চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে জাকিয়া সুলতানাকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সচিব থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি পান।
তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১০তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাকিয়া শিল্প মন্ত্রণালয় ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল), পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরসহ সরকারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পৃথক আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসানের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হলো। কামরুল হাসান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মৌলভীবাজারের ডিসি ছিলেন। আওয়ামী লীগের আমলে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাচ্ছে এবং ওএসডি করছে সরকার। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম তাদের ওএসডি করা হচ্ছে, যাদের ২৫ বছরের বেশি তাদের দেয়া হচ্ছে বাধ্যতামূলক অবসর।
‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এর ৪৫ ধারায় দেওয়া ক্ষমতাবলে তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। তারা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধা পাবেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা জেলা প্রশাসক হিসেবে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ২১ জন কর্মকর্তাকে বৃহস্পতিবার জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে। এর আগে ৪৩ জনকে ওএসডি করা হয়েছে।
এ ছাড়া, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগে যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আওয়ামী লীগের আমলের আরেক বিতর্কিত কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানাকেও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তার চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সায়লা ফারজানাকে ওএসডি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তিনি প্রশাসনের ক্যাডার সার্ভিসের নারী কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব ছিলেন। আওয়ামী লীগের সময় প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম তার স্বামী ছিলেন। তার স্বামী মনিরুল ইসলামকেও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :