স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বহু অপকর্মের হোতা হিসেবে পরিচিত যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে অর্ন্তর্বতী সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বরখাস্তের কথা জানানো হয়।
গত কয়েক মাসে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে ধনঞ্জয়ের অপকর্ম ও দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক নানাভাবে হয়রানী করেন ধনঞ্জয় দাস।
তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগেই তাকে বরখাস্তের কথা জানিয়েছে সরকার।
এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব ও পরে রেশম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক হিসেবে বদলি হওয়া ধনঞ্জয় কুমার দাসকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। সেখানেও যোগদান করেননি তিনি। সেসময় পুরনায় স্বরাষ্ট্রে ফেরার চেষ্টা চালান।
[35053]
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন ধনঞ্জয় কুমার দাস। পরে তাকে রেশম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক হিসেবে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যোগ দেননি। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর তাকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহযোগী হিসেবে ধনঞ্জয় কুমার দাসের নাম এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ছিলেন ধনঞ্জয় কুমার দাস।
২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব (১৫০৮৯) হিসেবে যোগ দেন তিনি। সরকারের অনুমোদনের পর দেশজুড়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলির অর্ডার হতো তার স্বাক্ষরে। টানা প্রায় পাঁচ বছর ছিলেন এই দায়িত্বে। এতে এই স্বল্প সময়েই তিনি হয়েছেন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক। তার এই অবৈধ আয়ের বিপুল অংশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া ও ভারতে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
[35059]
২০২২ সালের ১০ এপ্রিলে সরকারের একটি গোপন প্রতিবেদনে ধনঞ্জয় কুমার দাস সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিনি চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ও কট্টর ইস্কনপন্থী। তিনি ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জননিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত। পুলিশ নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে তিনি বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। ২০১৯ সালে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগে ১০ জনের নিকট থেকে এক কোটি টাকা নেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।’
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডে জড়িত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন ওই সময়ে। তার দুর্নীতির বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে ‘জনশ্রুতি রয়েছে’ উল্লেখ আরও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি থাকাকালে সেখানে সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন। বাড়ি কিনেছেন কানাডায়। তার অবৈধ আয়ের অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন।
[35059]
ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পদোন্নোতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকদের তিনি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের কভার পোস্টিংয়ে কর্মরত গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মাশিয়াল কাউন্সেলর ও প্রথম সচিব পদে প্রার্থী ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস। ওই সময়ে তার জীবন বৃত্তান্ত যাচাই সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।