গৌরব ও বেদনাঘেরা মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া শহীদদের স্মরণে জাতি শ্রদ্ধাভরে পালন করছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্তিতে সারাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদায়।
রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর কূটনীতিক, ভাষাসৈনিক, রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এ বছর দিবসটি পালনে দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রমী চিত্র। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে আগের মতো সরকারনিয়ন্ত্রিত আনুষ্ঠানিকতা এবার অনুপস্থিত। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবার সুষ্ঠুভাবে দিবসটি পালন করছে, যা আগে বাধাগ্রস্ত হতো।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকা বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা আলপনা ও চিত্রকর্মের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। শহীদ মিনারের বেদি, রাজপথ ও দেয়ালে প্রতিবাদী শিল্পকর্মের ছোঁয়া লেগেছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শহীদ মিনার ও সংলগ্ন এলাকায় বসানো হয়েছে চেকপোস্ট, মোতায়েন করা হয়েছে র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন ও আনসার সদস্যদের।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে।
১৯৫২ সালের এই দিনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি না দেওয়ায় এবং উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ রাস্তায় নামে। ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে। তাদের আত্মত্যাগের ফলেই আজ বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদদের স্মরণে ফাতেহা পাঠ, কোরআনখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া, দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভাষার জন্য আত্মত্যাগের এই গৌরবময় ইতিহাস আজও বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করে, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকারে জাতিকে নতুন করে শপথ নিতে আহ্বান জানায়।