আজ বইমেলায় নামছে বইপ্রেমীদের ঢল

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম

আজ বইমেলায় নামছে বইপ্রেমীদের ঢল

ছবি: সংগৃহীত

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার এমনিতেই লোকে লোকারণ্য থাকে বইমেলা। তার মধ্যে আজ আবার একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই ভাষার জন্য যে বীর সন্তানেরা জীবন দিয়ে গেছেন, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীজুড়ে নামবে বাঙালির সরব পদচারণ। সবারই গন্তব্য হবে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে মানুষের সেই ঢল আছড়ে পড়বে বইমেলায়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঢল সামাল দিতে বেশ প্রস্তুতিও নিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রেতারা। এদিকে নতুন প্রজন্মের কাছে একুশের চেতনা তুলে ধরার লক্ষ্যেই প্রতিবছর ভাষার মাসে বর্ণাঢ্যভাবে আয়োজন করা হয় একুশে বইমেলা। তবে দীর্ঘ এ আয়োজনে ভাষা আন্দোলন ইতিহাস বরাবরই  উপেক্ষিত। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি বই এসেছে এবারের মেলায়।

একাধিক প্রকাশক জানান, ভাষা আন্দোলনের নির্ভরযোগ্য ইতিহাস জানতে মানুষের অনেক আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু আন্দোলনে ইতিহাস ও পূর্বাপর নিয়ে যথাযথ পাণ্ডুলিপি ও পূর্ণাঙ্গ গবেষণার অভাবে আগ্রহ থাকলেও বই প্রকাশ করতে পারছেন না তারা। এ নিয়ে আরো গবেষণাধর্মী বই লেখা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে কথা প্রকাশের ব্যবস্থাপক মো. ইউনুছ বলেন, ভাষা আন্দোলনের পাণ্ডুলিপি লেখা অনেক কঠিন। তাই কেউ লিখতে চায় না। এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও বই প্রকাশ করা সম্ভব হয় না।  

প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিন যখন বিক্রি মন্দা ছিল, তখন প্রকাশক ও লেখকদের সব স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি ঘিরে। একুশের শাণিত চেতনায় ঋদ্ধ বইমেলায় আজ শুক্রবার ঢল নামবে। হাতে হাতে ব্যাগভর্তি বইমেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সফলতার পথে। এ ছাড়া সপ্তাহের শেষদিন গতকাল বৃহস্পতিবার মেলাজুড়ে লোকজনের আনাগোনা ছিল লক্ষ করার মতো। এদিনের বিকিকিনিও ছিল আশাব্যঞ্জক।

প্রকাশনা সংস্থা পানকৌড়ির ব্যবস্থাপক এলাহী মাসুদ বলেন, আজ  (বৃহস্পতিবার)  বিক্রি মোটামুটি আছে। তবে কাল (শুক্রবার)  ২১ ফেব্রুয়ারি। আর কালকের (শুক্রবার) অপেক্ষায় আছি আমরা। একুশে বইমেলার জন্য পহেলা ফাল্গুন ও ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটার জন্যই সব প্রকাশক মুখিয়ে থাকেন। যেহেতু পহেলা ফাল্গুন ভালোবাসা দিবস চলে গেছে। তাই আমাদের সব আশা-আকাক্সক্ষা একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরেই।

  • নতুন বই 

মেলার ২০তম দিনে নতুন বই এসেছে ১১২টি। এর মধ্যে গল্পের বই ১৩টি, উপন্যাস ৮টি, প্রবন্ধ ২টি, কবিতার বই ২৭টি, গবেষণা ২টি, ছড়ার বই ৩টি, শিশুতোষ ৩টি, জীবনী ৩টি, রচনাবলি ৩টি, নাটকের ২টি, বিজ্ঞানের ২টি, ভ্রমণের ৩টি, ইতিহাসের ৩টি, চিকিৎসার ৩টি, ভাষার ৩টি, গণ-অভ্যুত্থানের ১টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদের ১টি, সায়েন্সফিকশনের ২টি ও অন্যান্য ২৭টি। গত ২০ দিনে মোট নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১ হাজার ৯০৫টি।

মূল মঞ্চের আয়োজন: বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় উপন্যাস, ‘ঔপন্যাসিক ও রশীদ করীমের উপন্যাসবীক্ষা কয়েকটি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হামীম কামরুল হক। আলোচনায় অংশ নেন অনিরুদ্ধ কাহালি এবং সাখাওয়াত টিপু। সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়ুয়া।

আলোচকদ্বয় বলেন, রশীদ করীম তাঁর জীবদ্দশায় ব্রিটিশ পর্ব, পাকিস্তান পর্ব ও বাংলাদেশ পর্ব প্রত্যক্ষ করেছেন, ফলে তার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপক। আধুনিক সমাজে ব্যক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো রশীদ করীমের উপন্যাসে প্রবলভাবে উপস্থিত হয়েছে। তিনি সমাজকে অনেক গভীরভাবে বিচার করেছেন। তার উপন্যাসের চরিত্রগুলো পাঠককে মোহাবিষ্ট করে এবং পাঠক সহজেই নিজেকে সেইসব চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম করতে পারেন।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মো. সোলায়মান চৌধুরী, সেলিনা আক্তার, শাহীন রিজভী, মো. আশরাফুল হক, তাজ ইসলাম, আলতাফ হোসাইন রানা, চঞ্চল শাহরিয়ার, জুবায়ের আন নায়েম এবং আউয়াল খোন্দকার। আবৃত্তি  করেন এস এম শাহনুর, এম এ কুদ্দুস, কামরুন নেসা চৌধুরী এবং জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা।

  • আজকের আয়োজন

আজ শুক্রবার। বইমেলা শুরু হবে সকাল ৭টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি হাসান হাফিজ। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৫। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

আরবি/এফআই

Link copied!