গত বছরের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার হটিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইন, বিচার, সংসদ, অর্থনীতি, ব্যাংকব্যবস্থাসহ অনেক বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। কিন্তু সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবতে থাকা দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে নানা রকমের সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর মতো তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। উল্টো গ্যাসের দাম বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এনিয়ে গণশুনানিতে চরম হট্টগোলও হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
কেননা ডলারের উচ্চমূল্য এবং ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল আমদানির খরচ বাড়ছেই। এ ছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চতয়ার কারণে অনেক কারখানায় চলছে শ্রমিক অসন্তোষ।
শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, কোভিড-১৯-এ বিপর্যস্ত হওয়া অর্থনীতি চার বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এরই মধ্যে গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দেশের প্রায় সব সেক্টরেই চলছে বিশৃঙ্খলা। আবার অনিশ্চয়তার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্পকারখানা। অনেক উদ্যোক্তাই পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অনেকেই হয়েছেন কর্মহীন।
কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, আগের সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাসহ পুরো অর্থনীতিকে ধ্বংস করে গেছে। এই সরকার এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসার মতো আস্থা পাচ্ছেন না।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্যমতে, বিদেশি বিনিয়োগে বড় ধরনের পতন হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমে চার ভাগের প্রায় এক ভাগে নেমেছে। এ সময় বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে ৭১ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
অর্থবিভাগ বলছে, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার বেলায় আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে প্রকট। এ ছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেও নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে না। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিও ভালো নয়।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পূর্ব শত হচ্ছে পুঁজির নিশ্চয়তা। একই সঙ্গে বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বাজায় থাকা। এর কোনোটাই এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই বলে মনে করেন তিনি।
এমনকি দীর্ঘদিন ধরেই এসব সংকট চলে আসছে। এ কারণে শিল্প উদ্যোক্তারা নতুন করে কোনো বিনিয়োগে আসছেন না বলে তিনি মনে করেন।