ইতিহাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই এগিয়ে চলছে রাজধানীর চকবাজারের ঐতিহ্যের ইফতার বাজার। আধুনিকতার নানা বিবর্তনেও যুগ যুগ ধরে শাহি ইফতারের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে চকবাজার। ভিন্ন স্বাদ নিতে চকবাজারের ইফতার কিনতে ছুটে আসছেন ভোজনরসিকরা।
বর্তমানে চলমান ফাস্টফুড কালচার এবং তারকা হোটেলের বুফে আয়োজনও চকবাজারের ইফতারের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরাতে পারেনি। প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো এই ইফতার বাজার যেমন ঐতিহ্যবাহী, তেমনি সারা দেশেই রয়েছে সুখ্যাতি।
পুরান ঢাকার চকবাজার শাহি মসজিদের সামনের ইফতারি কিনতে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় মানুষকে। গতকাল রোজার প্রথম দিনেই এমন চিত্রই দেখা মেলে।
বলতে গেলে, প্রথম দিনেই জমে উঠেছে চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার। সরেজমিনে গতকাল রোববার বিকেলে চকবাজার শাহি মসজিদ এলাকার ইফতার বাজারে গেলে দেখা যায় চিরচেনা হৈহুল্লোড়-হৈচৈয়ের চিত্র।
‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’, ‘আসেন আসেন’, ‘বাইছা লন ভালো খান’ ‘লইবেন একবার খাইবেন বারবার’সহ নানা হাঁক-ডাক শোনা যায়। সেখানে একদিকে চলছে ইফতার তৈরি, অন্যদিকে সাজানো। কেউ আবার ব্যস্ত বিক্রিতে। ক্রেতারাও কিনছেন যার যার পছন্দ আর সামর্থ অনুযায়ী।
এই এলাকার শাহজাহান মিয়ার দোকানে বিক্রি হচ্ছে আস্ত মুরগির রোস্ট, কোয়েল পাখির রোস্টসহ কয়েক পদের ইফতার। তিনি জানান, আস্ত মুরগির রোস্ট ৩৫০ টাকা আর কোয়েল পাখির রোস্ট প্রতিটি ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানে ইফতারি নিয়ে বসেন বলে জানান তিনি।
গত বছর কোয়েলের রোস্ট বিক্রি করেছি ৮০ টাকা পিস। এ বছর কোয়েলই কিনতে হয়েছে ৮০ টাকার বেশি। রান্না ও মসলার খরচ তো আরও ১০ টাকা। ১০ টাকা লাভ না করলে কীভাবে হবে। খাবার না ঢেকে কেন খোলাভাবে রাখছেন- এমন প্রশ্নে সেখানকার দোকানিরা বলেন, খাবার ঢেকে রাখলে সবাই দেখতে পায় না। ভালোভাবে না দেখলে অনেকে কিনতে চান না।
সামনে এগোতেই দেখা যায়, ‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’ নামক বিভিন্ন পদের মিশ্রণের এই বিশেষ খাবারটি নিয়ে চারদিকে চিৎকার, চেঁচামেচি-শোরগোল। এবারও এই খাবারটির দাম রাখা হয়েছে কেজিপ্রতি ১০০০ টাকা। কেউ আধা কেজি, কেউবা ২৫০ গ্রাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বিক্রেতারা জানান, এখানে পাকিস্তান আমল থেকে এই আইটেম চলে আসছে। এখন আমি আর আমার ভাইয়েরা বসি। আমাদের খাবার তৈরির খরচ বাড়লেও দাম সেই তুলনাই বাড়াইনি, লাভের পরিমাণটা কমিয়ে দিয়েছি। মুরগির রোস্টসহ এই বাজারের আরেক বিখ্যাত খাবার হচ্ছে সুতি কাবাব।
গরুর সুতি কাবাব প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকায়, খাসির সুতি কাবাব বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি শাহী ছোলা ২৮০, ঘুঘনি ১৫০, চিকেন আচারি ১ হাজার ৪০০ এবং কাশ্মীরি বিফ আচারি ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য খাবারগুলোর মধ্যে প্রতিটি জালি কাবাব ৪০, টানা পরোটা ৫০, কিমা পরোটা ৮০, কাঠি কাবাব ৫০ এবং ডিম চপ ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পাশাপাশি দইবড়া ১০০ টাকা (৩টি), ফালুদা কেজি ২২০ টাকা, পেস্তা বাদাম শরবত ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা লিটার, মুরগির ললিপপ প্রতিটি ৫০ টাকা, চিকেন ফিংগার ৫০ টাকা, চিকেন স্যান্ডুইচ ৫০ টাকা, চিকেন স্প্রিং রোল ৫০ টাকা।
প্রচলিত ইফতারের পাশাপাশি নানা স্বাদের বাহারি আয়োজন সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। বাহারি এসব ইফতারের স্বাদ নিতে দুপুরেই দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনবিলাসীরা ছুটে এসেছেন।
আস্ত মুরগি, জালি কাবাব, সিঙাড়া, সমুচা, চিকেন টোস্ট, চিকেন পরোটা, বিফ পরোটা, নরমাল পরোটা, বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, ভেজিটেবল পাকোড়া, ডিম চপ, জিলাপি, সাসলিক, টিক্কা কাবাব, আটার জিলাপি, বড় সাইজের জিলাপি বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :