ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫

অগ্নিঝরা ৪ মার্চ ১৯৭১

আন্দোলনের তোড়ে প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৮:৫১ এএম
ছবি: সংগৃহীত

উনিশশ একাত্তরের মার্চের শুরু থেকেই এই বাংলায় ধারাবাহিক সংগ্রাম এগিয়ে চলছিল দ্রুততার সঙ্গে। অগ্নিঝরা মার্চের শুরুর ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকালে বোঝা যায়, বাঙালি জাতি কীভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য। অগ্নিঝরা মার্চের এইদিনে এসে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হয়েছিল আরও একটু।

বঙ্গবন্ধু বিবৃতির মধ্য দিয়ে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে এবং বিভিন্ন কমিটি গঠন করতে ও মুক্তিবাহিনী প্রস্তুত করতে ডাক দেন। আরেকদিকে এইদিনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের যার যার জায়গা থেকে করণীয় নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেন।

সে সময়ের জাতীয় দৈনিক বাংলা ১৯৭২ সালের মার্চ মাসজুড়ে আগের বছরের দিন স্মরণ করে ধারাবাহিক প্রকাশ করে। সেখানে আজকের দিন বিষয়ে লেখা হয়, ঢাকা ও সকল প্রদেশে সর্বাত্মক হরতাল পালন করা হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার জমায়েত শপথের মধ্য দিয়ে বাংলার মুক্তি আন্দোলন ধাপে ধাপে এগোতে থাকে। ঘরে ঘরে প্রস্তুতির ডাক দেন বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধু এদিন ডাক দিলেন, যেকোনো মূল্যে মুক্তিসংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। প্রস্তুত থাকতে হবে ঘরে ঘরে। শোষণ ও ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিটি নারী-পুরুষ যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে তা দেখে তিনি সবাইকে অভিনন্দন করেন। তিনি বলেন, আত্মত্যাগ ছাড়া মুক্তি আসবে না। কাজেই যেকোনো মূল্যে মুক্তিসংগ্রাম চালিয়ে যেতেই হবে।

সব শ্রেণির মানুষ যোগ দিয়েছে মুক্তির সংগ্রামে। এগিয়ে এসেছে শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, পেশাজীবীরা। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে এককাতারে শামিল হতে এগিয়ে এসেছেন শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক। বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পীরা এদিন থেকে বর্জন করেছেন অনুষ্ঠান। সার্বিক মুক্তি আদায়ের গণআন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে সাংবাদিক ইউনিয়ন। মিছিল ও সমাবেশের আয়োজনও করেছেন তারা।

মার্চের শুরুতে হাসপাতালে আহত সোনা মিয়া, আমিনুল, নজরুল ইসলাম, মাহবুব আলম মিয়া ও আরও অনেকে যন্ত্রণাকাতর মুখেও ঘোষণা করেছেন, সেরে উঠে আবার রুখে দাঁড়াবো (যদিও সোনা মিয়া কদিন পরেই শহিদ হয়েছিলেন)। হানাদাররা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছিল। এদিন চট্টগ্রামে তারা বেপরোয়াভাবে হত্যা করে একশ কুড়িজনকে। খুলনায় সাতজনকে। কিন্তু জনতা দমেনি। তারা আরও এগিয়েছে। ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নয়া কর্মসূচি ঘোষণা করে।

ছাত্রলীগ ও ডাকসুর আবেদন, ৬ মার্চের মধ্যে ঢাকা শহরে এবং ৭ মার্চের মধ্যে সারা দেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন শেষ করতে হবে। প্রতিটি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে একজন আহ্বায়ক ও ১০ জন সদস্য থাকবে।

আন্দোলনে একাত্ম হতে এগিয়ে আসে অন্যান্য দল। শিক্ষকরাও সভা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। স্বাধিকারের প্রচণ্ড আন্দোলন এগিয়ে গিয়েছিল গ্রাম থেকে গ্রামে।

সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ওপর যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় ৪ মার্চের একটি সভা থেকে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ‘স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার না দিলে সাংবাদিকরা বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন না।’

এভাবেই মার্চের শুরু থেকেই ধাপে ধাপে আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আকার ধারণ করতে শুরু করে। বাঙালি তাদের চির কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে শুরু করে।