ঢাকা বুধবার, ০৫ মার্চ, ২০২৫

দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ১২:৪০ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একাত্তরের মার্চ মাস শুরুই হয় যেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় বাংলার আনাচে-কানাচে ধারাবাহিক সংগ্রাম দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলতে থাকে। 

অগ্নিঝরা মার্চের ঘটনাপ্রবাহই বলে দেয়, বাঙালি জাতি কীভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য। অগ্নিঝরা মার্চের পঞ্চম দিনে প্রশাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।

স্বাধীনতাকামী জাগ্রত বাঙালির সর্বাত্মক সংগ্রামের পঞ্চম দিনে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে শ্রমিক-জনতার মিছিলে চালানো গুলিতে সেদিন চার ব্যক্তি নিহত, ১৪ জন আহত হন। 

গুলিবর্ষণে আহত হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান রফিজ উদ্দিন (৩৫)। আহত আব্দুল মতিনও মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক)। ১৯৭১ সালের প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে ১৯৭২ সালে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দৈনিক বাংলা পত্রিকা।

জনতার ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে একাত্তরের এই দিনে দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। মুক্তিকামী বাঙালির উত্তাল ও অপ্রতিরোধ্য দুর্বার আন্দোলনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভিত নড়ে ওঠে। 

নিরীহ মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে, দ্বিগুণ গতিতে গর্জে ওঠে বাংলার প্রতিবাদী মানুষ। ঐতিহাসিক মার্চের এই দিনে ঘটে আরও উল্লেখযোগ্য ঘটনা। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণাকে অবাঞ্ছিত ও অগণতান্ত্রিক ঘোষণা করে বেলুচিস্তান ন্যাপ।

গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা ছিল ২২২। জেলায় জেলায় হরতাল চলছে। রাজশাহী, রংপুর, যশোরও উত্তাল। নারায়ণগঞ্জের জনসভায় শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমেদ। ঢাকায় সেদিন লেখক, শিল্পী ও সাহিত্যসভা অনুষ্ঠিত হয়। 

জাগ্রত বাঙালির প্রার্থিত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের শপথ নেন তারা। একদিকে সামরিক বাহিনীর পতাকা, অন্যদিকে জনগণের সামনে স্বাধীনতার সূর্য। ৫ মার্চ ১৯৭১। ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, টঙ্গীতে গুলিবর্ষণে চারজন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৮ (পরে আরও বেড়েছিল)। 

রাজশাহী-রংপুরে আবার কারফিউ। এই দিনে ভুট্টোর সঙ্গে ইয়াহিয়ার পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক হয়। গভীর রাতে পাওয়া এক খবরে জানা যায়, জুলফিকার আলি ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে পাঁচ ঘণ্টা টানা বৈঠক করেন।

রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্ররা নিহত হয়েছেন। 

নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়। নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিতে হতাহতের ঘটনায় সারা দেশে মুক্তিকামী মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।