ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫

এখনো ছাপার অপেক্ষায় ৩ কোটি বই

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ০২:৪৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

টানা ১৫ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনে উৎসব করে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেড় দশক পর এবার  ভাটা পড়েছে সেই রীতিতে। অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করেছে বই উৎসব। তা ছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও বই ছাপার কাজ দেরিতে শুরু করায় সব বই ছাপাও শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে নতুন বছরের ২ মাস শেষ হলেও সব বই পায়নি শিক্ষার্থীরা।

এখনো প্রায় ৩ কোটি পাঠ্যবই ছাপানোই হয়নি। ছাপানো শেষ হলেও বাঁধাই, মান যাচাই ও অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও ৩ কোটি বই। অনেক শিক্ষার্থী পেয়েছে আংশিক বই। চলছে শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় মাস। নতুন শ্রেণির সব বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এমনিতেই দিশেহারা। তার ওপর বই না দিয়েই সব বইয়ের পড়া দিয়ে পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ কয়েকটি ছুটি মিলিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ৪০ দিনের ছুটিতে গেছে স্কুলগুলো। এতে অস্বস্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

জানা গেছে, সব পাঠ্যবই ছাপাতে প্রায় ১ লাখ টন কাগজের প্রয়োজন হয়। গত ডিসেম্বর থেকে কোনো কারণ ছাড়াই দেশে কাগজের মিল-মালিকরা টনপ্রতি কাগজের দাম বাড়িয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এ কারণে মুদ্রণকারীরা চীন থেকে কাগজ আমদানি করছেন। কিন্তু এখনো সব কাগজ পাওয়া যায়নি। আমদানিতে সময় লাগছে। এ রকম অবস্থায় মুদ্রণকারীরা দেশীয় মিল-মালিকদের থেকে কাগজ কিনতে চাচ্ছেন না। কারণ এতে তাদের লোকসান হবে।

তবে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পাবে বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

তিনি জানিয়েছিলেন, ‘প্রথমদিকে আমরা আর্ট পেপার পাচ্ছিলাম না। কাগজের সংকটও ছিল। পরে ছাত্র প্রতিনিধি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যদের সহায়তায় সে সমস্যার সমাধান হয়েছে। আমাদের প্রেসগুলোতে দিনরাত কাজ হচ্ছে। আমরা গত বছরের শেষ দিকে একসঙ্গে সব ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছি। আবার বাজারে কাগজের সংকট রয়েছে। ফলে এর চেয়ে গতি বাড়ানোর সুযোগ আমাদের ছিল না। তবে মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি থেকে আমাদের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বইয়ের কাজ শেষ করতে বলেছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এর পরও মনে হচ্ছে, সব বইয়ের কাজ শেষ হতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে।’

এনসিটিবি প্রথমে গত জানুয়ারি মাসের মধ্যে সব পাঠ্যবই সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সব বই পাবে শিক্ষার্থীরা। শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা হলো না। বাস্তবতা বলছে, আসন্ন ঈদের আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই দেওয়া সম্ভব হবে না। বই পেতে যতই দেরি হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতিও ততই বাড়ছে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের হাতে বই দিতে শিক্ষাবর্ষের তিন মাসের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে, তাই শিক্ষাপঞ্জিতে পরিবর্তন এনে বিশেষ সিলেবাস করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩ জন। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি বই। মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা ছাপা হচ্ছে।