দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম দোহাজারী রেলওয়ে পাইকারী বাজারে ভরপুর সবজি উঠলেও পাইকারী ব্যবসায়ীরা না আসায় কৃষক পণ্য বিক্রি করতে পাচ্ছে না। সূর্য উঠার আগ থেকে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া উপজেলার হাজার হাজার কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে বাজারে আসলেও সবজির পাইকাররা না থাকায় অনেক সবজি চাষী তাদের উৎপাদিত সবজি বিশেষ করে টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি বিক্রি করতে না সবজি বাজার সংলগ্ন শঙ্খ নদীতে ফেলে দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। ফলে ভরা মৌসুমে এসে অন্যতম সবজি নিয়ে বিপদে পড়েছেন শঙ্খচরের অসংখ্য কৃষক।
সরেজমিন পরিদর্শনে ৫ মার্চ সকালে দোহাজারী রেলওয়ের সবজির পাইকারী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, উৎপাদন ভালো হওয়ায় ভরপুরভাবে পাইকারী সবজি বাজারে উঠেছে নানা রকম সবজি। তৎমধ্য টমেটো, বেগুন, মুলা ও ফুলকপি, বাঁধাকপি নিয়ে কৃষকদের বিড়ম্বনার শেষ নেই।
আগাম হিসেবে গত ৫ মাস আগে রোপিত সবজিতে কৃষকরা ভালো দাম পেলেও শীতকালীন সবজিসহ ভরা মৌসুমে এসে টমেটো, মুলা,বেগুন ফুলকপি,বাঁধা কপির দাম নেমে এসেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। গত ৫ মাস ধরে দোহাজারী রেলওয়ে সবজির পাইকারী বাজারে অন্যান্য সবজির দাম নিন্ম পর্যায়ে নেমে এসেছে ।
মুলা, বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধা কপি টমেটোতে এমন পরিস্থিতি হয়েছে, ক্ষেত থেকে তুলে ফেলে দিতে শ্রমিক খরচও লোকসান দিতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় শত শত হেক্টর জমির টমেটো, মুলা, বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধা কপি তুলে ফেলে দিচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা জানান, মুলা, বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধা কপি ক্ষেত থেকে তুলে প্রক্রিজাত করে বাজারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিকেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা খরচ পড়ে।
তাই উৎপাদন খরচও না ওঠায় কৃষকরা নিরুপায় হয়ে টমেটো, মুলা,বেগুন,ফুলকপি ও বাঁধা কপি ক্ষেত থেকে তুলে ফেলে দিচ্ছেন। বর্তমানে একইসাথে উত্তর বঙ্গের সবজিও চট্টগ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন বাজারে এসে পড়ায় এ অঞ্চলের সবজির এমন দশা বলে মত দিয়েছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
প্রতি মৌসুমে শঙ্খচরে ৮ থেকে ৯ কানি জমিতে সবজির আবাদ করেন কালিয়াইশের কৃষক দেলোয়ার হোসেন। তিনি মুলা, বেগুন, টমটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, ধনেপাতাসহ অন্যান্য সবজির আবাদ করতে এবার ৮লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে, ১লক্ষ টাকার সবজিও বিক্রি করতে পারেননি। খাগরিয়া এলাকা কৃষক কামাল জানান, তিনি ২ খানি টমটো খেত করেছেন খরচ পড়েছে ৭৫/৮০টাকা কিন্তু এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার টমটো বিক্রি করতে পারেননি।
তাও বিক্রি হচ্ছে না ফলে অনেক টমটো খেত থেকে তুলছেন না। কারণ হিসেবে বলেন মানুষের মজুরী ও বাজারে আনার গাড়ীভাড়াও হচ্ছে না। কৃষক আমজাদ বলেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত ফসল ফেলে দিলেও করার কিছুই নেই তাদের। পূর্ব দোহাজারীর রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি মুলা,ফুলকপি ও বেগুন চাষ করেছেন ৫ থেকে ৬ কানি ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা এভাবে শঙ্খচরের শত শত কৃষকের একই দশা বলে জানা যায়। শঙ্খচরের উৎপাদিত সবজি দোহাজারী রেলওয়ে পাইকারী সবজি বাজারে টমটো কেজিপ্রতি ৪ টাকা মুলা ২ থেকে ৩ টাকা, ফুলকপি ৪ থেকে ৫ টাকা, বেগুন ৫ থেকে ৬ টাকা ও বাঁধা কপি ৫ থেকে ৬টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাজার থেকে এক’শ গজ দুরে দোহাজারী সদর বাজারে বিক্রি হচ্ছে টমটো- ১৫-২০টাকা,বেগুন-২৫-৩০ টাকা, ফুল ও বাঁধাকপি-২০-২৫টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :