দীর্ঘ ৪০ বছর পর এমপিওভুক্তির দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে দেশের ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের। প্রথম ধাপে ১ হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ৬ হাজারের বেশি শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে যাচ্ছেন।
বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বুধবার (৫ মার্চ) তাঁর শেষ কর্মদিবসে এই সংক্রান্ত ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। ফলে খুব শিগগিরই তারা সরকারি বেতন-ভাতা পাবেন।
বিদায়ী বক্তব্যে উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার কারিকুলাম প্রায় একই ধরনের। কিন্তু ইবতেদায়ী শিক্ষকদের সঙ্গে বৈষম্য ছিল। এই বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মতো অনেক ইবতেদায়ী মাদ্রাসায়ও বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। তবুও তারা এমপিওভুক্তির বাইরে ছিল, যা ঠিক ছিল না। তাই প্রথম ধাপে নিবন্ধিত ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে ইবতেদায়ী শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার কাজ চলছিল। মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছে। অনুমোদন মিললেই মে মাসের মধ্যে শিক্ষকরা তাদের বেতন-ভাতা পেতে পারেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ও এই উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে। নতুন শিক্ষা উপদেষ্টার শপথ অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অর্থ সচিবকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। অর্থ সচিব প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন মিললে অর্থ ছাড়ের আশ্বাস দিয়েছেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬ হাজার ৯৯৭টি কোডভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাবে আরও পাঁচ হাজারের মতো মাদ্রাসা আছে। প্রথম পর্যায়ে এমপিওভুক্ত ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষকসহ মোট চারজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হবেন। এতে মোট ৬ হাজার ৭৬ জন শিক্ষক সরকারি বেতন-ভাতার আওতায় আসবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। এর আগে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এবার পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মে মাস থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া শুরু হবে। এ জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট থেকে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘একসঙ্গে সব মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব না। তবে যেসব মাদ্রাসার নিবন্ধন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে, সেগুলো ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত করা হবে।’
শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের এই দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে, যা তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং দেশের ধর্মীয় শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।